সুভাষচন্দ্র বসু (Day ১১)


সুভাষচন্দ্র বসু 

জন্ম: ২৩ জানুয়ারি, ১৮৯৭  ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক চিরস্মরণীয় কিংবদন্তি নেতা। তিনি নেতাজি নামে সমধিক পরিচিত। তাঁর বিখ্যাত উক্তি "তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেবো।" 

১৯২১ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি তিনি দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশকে চিঠি লিখে জানান যে, তিনি ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস (আইসিএস) পরীক্ষায় চতুর্থ হয়েছেন। তবে তিনি ব্রিটিশ সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মী হতে চান না। অর্থাৎ, সরকারি চাকরিতে তিনি যোগ দিচ্ছেন না।

দেশে ফিরে তিনি ভারতের সাধারণ মানুষের জন্যই কাজ করতে চান। চিত্তরঞ্জন দাশকে লেখা ওই চিঠিতেই কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন তরুণ সুভাষ।


১৯২১ সালে কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার পরে সুভাষচন্দ্রর প্রথম উল্লেখযোগ্য কর্মসূচী ছিল ‘প্রিন্স অব ওয়েলস’-এর ভারত সফর বয়কট করার আন্দোলন গড়ে তোলা। ‘প্রিন্স অব ওয়েলস’-এর অভ্যর্থনার আসরেই খাদির বস্ত্র বিলি ও বিক্রি করার চেষ্টা করেন সুভাষচন্দ্র ও তাঁর কয়েকজন অনুগামী।

আন্দোলন ঠেকাতে তখন কংগ্রেসের নেতা-কর্মীদের গণহারে গ্রেফতার করা হয়। গ্রফতার হন চিত্তরঞ্জন দাশ আর সুভাষচন্দ্রও। এর পর চৌরি-চৌরার ঘটনায় গান্ধীজি তাঁর অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেওয়ায় হতাশ সুভাষচন্দ্র নবগঠিত স্বরাজ পার্টিতে সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। ১৯২৭ সালে কংগ্রেসে আবার ফিরে আসেন সুভাষ। ১৯২৮ সালে ‘অল ইন্ডিয়া ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রস’-এর সভাপতি নিযুক্ত হন তিনি।

ব্রিটিশ বিরোধী অসহযোগ আন্দোলনের ক্ষেত্রে গান্ধীজির সঙ্গে বরাবরই মত পার্থক্য ছিল সুভাষ আর ভিত্তালভাই প্যাটেলের। গান্ধীজি যেখানে অহিংস আন্দোলনের রাস্তা বেছে নেয়ার কথা বলছিলেন, সেখানে সুভাষের দর্শন বা মত ছিল, অস্ত্রের জবাব অস্ত্রেই দিতে হবে। গান্ধীজির সঙ্গে মত বিরোধের জেরে দু’বারের কংগ্রেস সভাপতি সুভাষচন্দ্র দলত্যাগ করে নতুন দল গঠন করেন সুভাষ। দলের নাম দেন ‘ফরোয়ার্ড ব্লক’। জাতীয় কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার পর তাঁর প্রায় ২০ বছরের রাজনৈতিক জীবনে সুভাষচন্দ্রকে মোট ১১ বার গ্রেফতার করে ব্রিটিশ সরকারের পুলিস প্রশাসন।

১৯৪১ সালে কলকাতার বাড়ি থেকে উধাও হয়ে গেলেন সুভাষ। ১৯৪২ সালে বার্লিন থেকে তাঁর কন্ঠ শোনা যায় ‘আজাদ হিন্দ’ রেডিও স্টেশনে। ভারতের স্বাধীনতার জন্য ১৯৪৩ সালে হিটলার-সহ জার্মানির উচ্চপদস্থ সামরিক কর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন সুভাষ। তখন রাসবিহারী বসুর উদ্যোগে জাপানে শুরু হয়ে গিয়েছে ‘আজাদ হিন্দ ফৌজ’ গঠনের প্রক্রিয়া।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের হাতে বন্দী ভারতীয় ব্রিটিশ সেনাদের একত্রিত করে ‘আজাদ হিন্দ ফৌজ’-এর লক্ষ্য এবং কার্যপ্রনালী তখনও স্থির হয়নি। সুভাষ জাপানে এসে পৌঁছাতেই ‘আজাদ হিন্দ ফৌজ’-এর দায়িত্ব তাঁর হাতে সঁপে দিলেন রাসবিহারী বসু। সুভাষ যোগ দিতেই ‘আজাদ হিন্দ ফৌজ’-এর কার্যকলাপ ও সক্রিয়তা বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। সুভাষচন্দ্র বসু হয়ে উঠলেন ‘আজাদ হিন্দ ফৌজ’-এর ‘নেতাজি’। পরবর্তীকালে ওই নামেই তাঁকে বেশি চেনেন দেশ-বিদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ।

নেতাজির নেতৃত্বে ব্রিটিশ বাহিনীকে পরাজিত করে কোহিমা দখল করে ‘আজাদ হিন্দ ফৌজ’। কিন্তু তার পর হিরোসিমা, নাগাসাকিতে মার্কিন পরমানু বোমার আঘাত সামরিক রসদে ভাঁটা পরে। থমকে যায় ভারতের প্রথম স্বাধীন সেনার জয়যাত্রা।

Comments

Popular posts from this blog

জালিয়ানওয়ালাবাগ

ত্রিপুরার আদিবাসী অঞ্চল স্বায়ত্তশাসিত জেলা পরিষদ

২১ মে – শহিদ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি