পরিবার না চলমান আন্দোলন (সংগৃহীত)


পরিবার না চলমান আন্দোলন 
 
এক জন কংগ্রেস কর্মী গান্ধী পরিবারের পক্ষে লিখবে, সেটাই তো স্বাভাবিক! তবে তো এ লেখায় নতুন কিছুই থাকবে না। ইতিহাসে তো নতুন কিছু থাকে না, যেটা হয়েছিল সেটাই তো ঐতিহাসিকরা লিখবেন। বহু দিন ধরে শোনা গান্ধী পরিবারের ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার অভিযোগ আবার 'ব্রেকিং নিউজ' হচ্ছে! আমার মতো এক ক্ষুদ্র কংগ্রেস কর্মীর তো কোনও মিডিয়া নেই, তাই এখানেই মনের মধ্যে জমে থাকা কিছু কথা লিখে মনের ভার কমানোর চেষ্টা করছি। যদি লেখায় কোনও ভুল থাকে, কোনও মিথ্যের আশ্রয় থাকে, জানাবেন। ভুল স্বীকার করে নেব। 
 
কিছু প্রচলিত কথা আছে, যেমন এই গান্ধীরা কি সেই গান্ধী! রক্তের সম্পর্ক ধরলে তো একদমই না। গান্ধী পদবি থাকলেই যে কেউ মহাত্মা গান্ধী হয়ে যাবে, সেটা আবার হয় নাকি!তবে তো মহাত্মার রক্তের সম্পর্কের মানুষগুলো সবাই মহাত্মা গান্ধী হয়ে যেতেন। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম জিন বাহিত হয়, কিন্তু জীববিদ্যা অনুসারে উপযুক্ত পরিবেশ ছাড়া জিনের বিকাশ হয় না। তাই মহাত্মা গান্ধীর জিন না পেলেও ইন্দিরা গান্ধীর পরিবারটা সেই পরিবেশ পেয়েছিলেন। মানুন, নাই মানুন, ভাল বলুন বা খারাপ,  দেশের মানুষ গান্ধীদের মেনেছেন বলেই তাঁরা আজও প্রাসঙ্গিক। আর এখানেই সেই পরিবেশের প্রভাব। এটা তো ডেভেলপমেন্টাল সাইকোলজির ক্লাসেও পড়ানো হয়! বিজ্ঞানকে অস্বীকার করব কী ভাবে?
 
আবার এটাও তো মিথ্যে হয়ে যাবে না, যে মতিলাল নেহরুর ছেলের নাম জওহরলাল নেহেরু, জওহরলাল নেহরুর মেয়ের নাম ইন্দিরা গান্ধী, ইন্দিরা গান্ধীর পুত্র রাজীব গান্ধী এবং রাজীব গান্ধী রাহুল গান্ধীর বাবা। এটাও তো সত্যি, ফিরোজ গান্ধীকে দত্তক নিয়েছিলেন মহাত্মা গান্ধী। গান্ধী পদবি তাঁরই দেওয়া। আমি তো এটাকেই পরিবেশের প্রভাব বলেছি।
 
মতিলাল নেহেরুর মাসিক আয় ছিল ঈর্ষণীয়। পোশাক-পরিচ্ছদ ছিল সাহেবের মতো। তাঁর কী প্রয়োজন পড়েছিল, গান্ধীজির ডাকে সাড়া দিয়ে অসহযোগ আন্দোলনে ভাগ নিয়ে জেলে যাওয়া? নিশ্চিন্তে অনেকের মতোই ব্রিটিশদের সঙ্গে তালে তাল মিলিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যের জীবন কাটাতে পারতেন। মজার কথা, ১৯০০ সালে যে বাড়িটি এলাহাবাদে তিনি কিনেছিলেন, সেটি ছিল শিক্ষাবিদ স্যার সঈদ আহমেদ খানের। ব্রিটিশ ইন্ডিয়ার অফিসারেরা সেখানে প্রায়ই যেতেন। বাড়িটিকে ব্রিটিশ এবং ভারতীয়দের একটি মিলন কেন্দ্র হিসেবেই তাঁরা ভাবতেন। সেই 'আনন্দ ভবন' পরবর্তী কালের 'স্বরাজ ভবন', ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম পীঠস্থান হয়ে ওঠে। ১৯২০ সালে মতিলাল নেহেরু বাড়িটিকে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসকে দিয়ে দেন, বাড়িটির নাম হয় 'স্বরাজ ভবন'। তার পাশেই আর একটি বাড়ি তৈরী করে ওটিরও নাম দেন 'আনন্দ ভবন'। ১৯৩০ সাল পর্যন্ত নেহেরু পরিবার সেখানেই থাকতেন। 
আমার কাছে এলাহাবাদের আকর্ষণ এই বাড়িটিই। আমার মতো পৈতেধারী বামুনের গঙ্গা-যমুনা-সরস্বতীর 'সঙ্গম' দেখার সাধ থাকবেই, সেখানেও গিয়েছি, পুজোও দিয়েছি। কিন্তু 'আনন্দ ভবন' আমার কাছে তীর্থক্ষেত্রের চেয়ে কম কিছু না। যারা গান্ধী-নেহেরু পরিবারের বিরুদ্ধে কুৎসা ছাড়া থাকতেই পারেন না, তাঁরা জানেন কি ৪০টি ঘর শুদ্ধ প্রাসাদোপম দু’টি বাড়িই ১৯৭০ সালে ইন্দিরা গান্ধী ভারত সরকারকে দিয়ে দেন? সেখানে মিউজিয়ামের সঙ্গে এখন আর্ট এন্ড ক্রাফটের ক্লাস নেওয়া হয়। পরিবারের সঙ্গে যদি এই ইতিহাস থাকে, তবে তাকে নিছক একটি পরিবার বলা যায় কি? আমার কাছে এই পরিবার তো একটি চলমান আন্দোলন। 
 
ব্যক্তিগত কুৎসা করা আমার রুচিতে বাঁধে। কিন্তু যারা কথায় কথায় নেহেরু-গান্ধীদের নামে কুৎসা করেন, তাঁদের ইতিহাসটা কেমন ছিল? বিনায়ক দামোদর সাভারকার সেলুলার জেলে ছিলেন এটা নিশ্চয়ই ইতিহাস, আবার তিনিই যে ব্রিটিশের কাছে তাঁর মুক্তির জন্য ক্ষমা ভিক্ষা করেছিলেন(সেই চিঠি এখনও জাতীয় মহাফেজ খানায় আছে), সেটাও তো ইতিহাস! আবার জওহরলাল নেহেরু প্রায় ৯ বছর (৩২৫৯ দিন) জেলে ছিলেন, নিজের স্ত্রী কমলা নেহরুর অসুস্থতার সময় থাকতে পারেননি(সুভাষ চন্দ্র বসু অসুস্থ কমলা নেহরুর চিকিৎসার দেখভাল করতেন), সেটাও তো প্রমাণিত ইতিহাস। মৌলানা আবুল কালাম আজাদ তাঁর স্ত্রীর মৃত্যুর সময়ও জেলে ছিলেন, কিন্তু পণ্ডিত নেহেরু বা মৌলানা আজাদ ইংরেজের কাছে মুচলেকা দেননি, এটাও তো সত্যি। 
 
আবার এটাও তো মিথ্যে নয় যে, পাকিস্তান প্রস্তাবের অন্যতম প্রস্তাবক ফজলুল হকের মন্ত্রিসভায় শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী অর্থমন্ত্রী ছিলেন। কংগ্রেসের নেতারা যখন জেলখানায় বন্দি, তখন হিন্দু মহাসভা, মুসলিম লিগের নেতারা ইংরেজের স্তাবকতা করছেন আর স্বাধীনতা আন্দোলনের বিরোধিতা করছেন— এগুলো তো মিথ্যা হয়ে যাবে না। কোনও মিডিয়া এগুলো বলবে না। কেউ রাত ৮-৯ টার শোতেও আনবে না। 

কয়েক দিন ধরেই কয়েকটি জাতীয় সংবাদমাধ্যম এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় সনিয়া গান্ধী এবং তাঁর পরিবার কী ভাবে কংগ্রেসের ক্ষমতা ধরে রেখেছেন, তার ধারাবাহিক চলছিল। কংগ্রেস ওয়ার্কিং

(অমিতাভ চক্রবর্তী ✍️)

Comments

Popular posts from this blog

জালিয়ানওয়ালাবাগ

ত্রিপুরার আদিবাসী অঞ্চল স্বায়ত্তশাসিত জেলা পরিষদ

২১ মে – শহিদ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি