বিনয়-বাদল-দীনেশ (Day-2)


ভারতের ইতিহাসে বিনয়-বাদল-দীনেশ এই ত্রয়ীর নাম সবসময়েই স্বর্ণাক্ষরে লেখা। দেশের প্রতি তাঁদের আত্মত্যাগ ভারতবাসীর মনে তাঁদের চিরস্মরণীয় আসন দিয়েছে। দেশের জন্য মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন যারা তাঁদের মধ্যে এই তিনটি নাম থাকে একদম প্রথমের দিকেই।

এনএস সিম্পসন ছিলেন অত্যন্ত অত্যাচারী এক মানুষ। তিনি কুখ্যাত ছিলেন জেলে বন্দীদের ওপর পাশবিক নির্যাতনের জন্য।

এই ত্রয়ী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তাঁকে হত্যা করার। শুধু সিম্পসনকে হত্যাই নয় তাঁদের লক্ষ্য ছিল কলকাতার ডালহৌসি স্কোয়ারে অবস্থিত ব্রিটিশ শাসকদের সচিবালয় রাইটার্স ভবনে আক্রমণ করে ব্রিটিশ অফিস পাড়ায় ত্রাস সৃষ্টি করার। ইংরেজদের বুঝিয়ে দেওয়ার এবার সময় বদলাচ্ছে।

সেই উদ্দেশ্য নিয়েই দীনেশ তাঁর দুই সঙ্গী বিনয় এবং বাদল ইউরোপীয় পোশাকে রাইটার্স বিল্ডিংয়ে প্রবেশ করেন এবং সিম্পসনকে গুলি করে হত্যা করেন। ব্রিটিশ পুলিশ গুলি শুরু করে। যার ফলশ্রুতিতে এই তিন তরুণ বিপ্লবীর সাথে পুলিশের একটি সংক্ষিপ্ত বন্দুকযুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধই ‘অলিন্দ যুদ্ধ নামে খ্যাত৷ পুলিশ দ্রুতই তাঁদেরকে পরাভূত করে ফেলে।

নির্ভীক এই বিপ্লবীরা সহজেই হার স্বীকার করে নিতে চাননি তাই পটাশিয়াম সায়নাইড খেয়ে আত্যহত্যার চেষ্টা করেন বাদল। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। বিনয় এবং দীনেশ নিজেদের রিভলভারের গুলি নিজদের মাথা লক্ষ্য করে চালান। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁদের আনা হয় হাসপাতালে। বিনয় ছিলেন মেডিকেলের ছাত্র তাই মৃত্যুকে কিভাবে বরন করতে হয় তা তিনি জানতেন, তাই ১৯৩০ সালের ১২ ই ডিসেম্বর রাতে বিনয় নিজের মাথার ব্যান্ডেড খুলে ক্ষত জায়গায় আঘাত করে মৃত্যুকে বরণ করেন।

শুরু হয় বিচারপ্রক্রিয়া। মামলার ফলাফল কি হতে চলেছে সে সম্পর্কে অবগত ছিলেন দীনেশ। ফাঁসির খবরে এতটুকুও বিচলিত ছিলেন না তিনি। বরং নিজের জীবন দেশমাতৃকাকে উৎসর্গ করার গর্বে দীপ্ত ছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ১৯৩১ সালের ৭ই জুলাই তাঁর ফাঁসি হয়ে যায়।

দেশের কাজের জন্য যারা নিজেদের উৎসর্গ করেছিলেন দেশের স্বাধীনতা তারা দেখে যেতে পারেননি। তবে ১৯৪৭ সালের ১৫ই অগাস্ট ভারত যে মুক্তির হাসি হাসতে পেরেছিল তাঁর জন্য এই সমস্ত মানুষদের অবদান অনস্বীকার্য। বাংলাসহ ভারতের অন্যান্য অংশে বিনয়, বাদল এবং দীনেশকে শহীদ হিসেবে সম্মান করা হয়। ভারত স্বাধীন হওয়ার পরে বিনয়-বাদল-দীনেশের নামানুসারে কলকাতার ডালহৌসি স্কোয়ারের নাম পালটে রাখা হয় বি-বা-দী বাগ। অনেক গুলো বছর পেরিয়ে গেলেও আজও এই ত্রয়ীর নামের গুরুত্ব ইতিহাসের পাতায় পাতায় উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে

Comments

Popular posts from this blog

জালিয়ানওয়ালাবাগ

ত্রিপুরার আদিবাসী অঞ্চল স্বায়ত্তশাসিত জেলা পরিষদ

২১ মে – শহিদ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি