Ami Hindu / আমি হিন্দু

আমি হিন্দু 



আমার ধর্ম আমাকে, মানুষ কে ভালোবাসতে, ক্ষমা করে, সত্যের পথে চলতে, অহিংসাকে জীবনের মুল মন্ত্র বানাতে শিখিয়েছে। 

হিন্দু ধর্মতত্ত্বে, যে ছয়টি জিনিসকে মানুষের পরম শত্রু বলা হয় তাহল: কাম (কামনা/লালসা), ক্রোধ, লোভ,মোহ (সংযুক্তি), অহংকার, এবং ঈর্ষা।

আমাদের প্রত্যেকটি আমাদের প্রত্যেকটি দেবী দেবতা, ধর্মগ্রন্থ। আমাদের একি জিনিস শিখিয়েছেন। 

রামায়ণে :- পুরুষোত্তম ভগবান শ্রী রামচন্দ্র আমাদের ত্যাগ শিখিয়েছেন, বড়দের আদেশ পালন করতে শিখিয়েছেন, ছোট ভাইবোনদের ভালোবাসতে শিখিয়ে, নিজের ঘরের স্ত্রীর প্রতি তথা নারী জাতির প্রতি সম্মান করতে শিখিয়েছেন, প্রয়োজনে নারীর সম্মানহানি করা প্রত্যেকটি অশুভশক্তির বিনাশ করতে শিখিয়েছেন।

মহাভারত:- আমাদের পরিবারের মধ্যে একতাবদ্ধ শিখিয়েছে, ত্যাগ শিখিয়েছে, ভ্রাতৃত্ববোধ শিখিয়েছে, মিলেমিশে একসঙ্গে থাকা শিখিয়েছে। নিজেদের মধ্যে ঐক্যবদ্ধতা থাকলে সমস্ত শক্তির সঙ্গে লড়াই করা সম্ভব তা আমাদের মহাভারত শিখিয়েছে। 

এবং মহাভারত আমাদের এও শিখিয়েছেন কাউকে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করলে, নারী জাতিকে অপমান করলে, অতি অহংকার করলে, অতি লালসার ফল ভয়ঙ্কর হয়। আর দেরিতে হলেও শুভ শক্তির সত্যের জয় সর্বদা হবেই।

দেবাদিদেব মহাদেব:- যার জটা হতে গঙ্গার উৎপত্তিতে গঙ্গাস্নান করলে যে কোন পাপ কার্জ থেকে মুক্তি সম্ভব। অর্থাৎ প্রবল ক্ষমার অধিকারী। যদি কেউ মন থেকে তার কৃতকার্যের জন্য ক্ষমা চায়, তবে মহাদেব তাকে ক্ষমা করে তাকে দ্বিতীয়বার সঠিক পথে চলার সুযোগ দেন (The Symbol of forgiveness)। মহাদেব তার ত্রিশালটিকে মাটিতে গেড়ে অহিংসার বার্তা দেন (The Symbol of non-violence)। 

ভোলা বাবা আমার শ্মশানে বসানে থাকেন, ছাই ভস্ম গায়ে মাখেন। যিনি ইহকাল থেকে পরকাল সবখানে বিরাজমান। 

সমুদ্র মন্থনের সময় সবার শেষে এক ভয়ঙ্কর বিষ উত্থিত হয়। সারা বিশ্ব সেই বিষের ঝাঁঝে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। সৃষ্টিরক্ষার জন্য স্বয়ং মহাদেব ওই বিষ পান করেন। প্রচণ্ড সেই বিষকে নিজের কণ্ঠে ধরে রাখেন তিনি। তাই তাঁর আর এক নাম নীলকণ্ঠ। 

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ :- যার থেকে আমরা ভালোবাসা শিখি। যার কাছে থেকে আমরা শিখি যে অন্যায় করে সে যতই আপন হোক না কেন তার বিরুদ্ধে গর্জে উঠতেই হবে। 

এবং শুধু দেবতা আর ধর্মগ্রন্থই নয়, আমাদের যারা ধর্ম গুরুরা রয়েছেন যাদের থেকে আমরা দীক্ষা পাই, তারাও আমাদের একটি শিক্ষা দিয়ে গেছেন। 

সে আপনি রাম ঠাকুর বলুন, অনুকুল ঠাকুর বলুন, শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব বলুন, স্বরূপানন্দ বলুন কিংবা অন্য যেই ধর্মগুলোর কথাই বলুন না কেন। সকলে আমাদের একি শিক্ষা দিয়েছেন। 

কিন্তু এ কলিযুগে কিছু মানুষ ধর্মের নামে কিন্তু ধর্মের দেখানোই পথ থেকে বিমুখ হয়ে, আমাদের ধর্মগ্রন্থ বলা কথাগুলি অমান্য করে মানুষে মানুষে বিদ্বেষে জাতিতে জাতিতে বিদ্বেষ সৃষ্টি করে। চারিদিকে হিংসা ছড়িয়ে মানুষের উপর আক্রমণ হামলা করে। ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করে। সমাজের ভাতৃত্ববোধকে বিনষ্ট করে। তারা ধর্মের মূল ভিত্তি বুঝেন না। 

যখন এই একই কথা লোকসভার বিরোধী দলনেতা শ্রী রাহুল গান্ধীজি লোকসভাতে দাঁড়িয়ে বলেন। তখন ওনার বক্তব্যের একটি অংশকে বিকৃত করে মানুষের মধ্যে বিদ্বেষ হিংসা ছড়ানোর চেষ্টা চলছে। যা দেশের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর। আমরা এর বিরোধিতা করি। আমাদের কেবল মূর্তি পূজা না মূর্তির পেছনে থাকা সে আদর্শের পূজা করতে হবে। সেই আদর্শকে মেনে, সেই নীতি কে মেনে সমাজকে উন্নত করতে হবে। সমাজে পুনরায় ভাতৃত্ববোধ, অহিংসা, লোভ, ক্ষমাকে ছড়িয়ে দিতে হবে। আমাদের এই ভারতবর্ষের মূল ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনতে হবে।

✍🏻 শ্রেয়শী লস্কর

Comments

Popular posts from this blog

জালিয়ানওয়ালাবাগ

যুক্তিতে ভক্তি