আন্তর্জাতিক নারী দিবস
বিশ্বে যা-কিছু মহান্ সৃষ্টি চির-কল্যাণকর,
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।
:- কাজী নজরুল ইসলাম
বছরের ৩৬৫ দিনের মধ্যে আলাদা করে নারীদের জন্যই শুধু একটা দিন। ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশে এই দিনটিকে বিশেষ ভাবে পালন করা হয়। আমাদের ভারতবর্ষে ও প্রতিবৎসর যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয় আন্তর্জাতিক নারী দিবস।
১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ নিউইয়র্ক শহরের একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা ন্যায্য মজুরি ও শ্রমের দাবিতে আন্দোলন করেন। আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল পুুরুষের সমান মজুরি এবং দৈনিক ৮ ঘণ্টা শ্রমের দাবি। এই আন্দোলনে পুলিশ নির্যাতন চালায় এবং অনেককে গ্রেপ্তার করে।
১৯০৯ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারি নিউইয়কে পোশাক শ্রমিক ইউনিয়নের নারীরা আরেকটি প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। ১৪ দিন ধরে এই প্রতিবাদ চলে এবং এতে প্রায় ২০ হাজার নারী শ্রমিক অংশগ্রহণ করেন। কর্মক্ষেত্রে অতিরিক্ত শ্রম এবং শিশুশ্রম বন্ধের দাবিতে তাঁরা এ আন্দোলন করেন। কর্মক্ষেত্রে এই আন্দোলন নারীদের ঐক্যবদ্ধতার একটি বড় উদাহরণ।
১৯১০ সালে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক সম্মেলনে জার্মান সমাজতাত্ত্বিক ক্লারা জেটকিন নারীর ভোটাধিকার এবং একটি নারী দিবস ঘোষণার দাবি জানান।
১৯১৭ সালে রাশিয়ায় নারীরা ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ রোববার নারী দিবস হিসেবে পালন করেন।
আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিসংঘ ১৯৭৫ সালের ৮ মার্চ দিনটিকে প্রথম আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। ১৯৭৭ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ সদস্য রাষ্ট্রদের নারী অধিকার ও বিশ্ব শান্তি রক্ষার জন্য জাতিসংঘ দিবস হিসাবে ৮ মার্চকে ঘোষণা করার আহ্বান জানায়।
১৯৭৯ সালের ডিসেম্বর মাসে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে এটি গৃহীত হয়। ১৯৮১ সালে ২০টি দেশ সমর্থন করার পর এটি কার্যকর হয়।
বহু সংগ্রামের পর পাওয়া এই নারী দিবস, সমগ্ৰ বিশ্বের সঙ্গে ভারতবর্ষে ও যথাযথা মর্যাদার সঙ্গে পালন করা হয়ে থাকে। প্রতিবৎসর নারী দিবস আলাদা আলাদা থিমে পালন করা হয়।
আমাদের ভারতবর্ষে স্বাধীনতার সঙ্গে সঙ্গেই নারীদের ভোটাধিকার দেওয়া হয়, যেখানে অন্যান্য দেশে ভোটাধিকারের জন্যও নারীদের অনেক লড়াই করতে হয়েছিল।
এখন মেয়েরা চাকরি করে, ব্যাবসা করে, রাজনীতি করে, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, উকিল, সব ক্ষেত্রে মেয়েরা ছেলেদের সমান। দেশ স্বাধীনের পর রচিত হয় সংবিধান, আমাদের ভারতীয় সংবিধানে ছেলে ও মেয়েকে সমান অধিকার দেওয়া হয়েছে।
আমাদের ভারতবর্ষে সর্ব কালীন শ্রেষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী ছিলেন একজন মহিলা শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী যিনি পাকিস্তানের ভূগোল পরিবর্তন করে দিয়েছিলেন।
এই দেশের বিভিন্ন রাজ্যে বহু মহিলা মুখ্যমন্ত্রী ও হয়েছেন। ভারতবর্ষে এমন অনেক মহিলারা আছেন যারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভাবে নারী শক্তির উদাহরণ কায়েম করেছেন যেমন সাবেত্রী বাই ফুলে, মাদার টেরিজা, আনি বেসান্ত, সরোজিনী নাইডু, আন্না চান্দী, বিজয় লক্ষী পন্ডিত, কিরণ বেদী, সুচেতা কৃপালিনী ইত্যাদি।
মহিলা দের সুরক্ষার জন্য, মহিলাদের সশক্তি করার জন্য মোট ৩৪ টি আইন রয়েছে, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী জি মহিলাদের সশক্তি করণের জন্য ৭৩ তম ও ৭৪ তম সংবিধান সংশোধনির মাধ্যমে পঞ্চায়েত, পৌরসভা ও পৌরনিগম নির্বাচনে এক তৃতীয়াংশ আসন মহিলা সংরক্ষিত করেন (পরবর্তী সময়ে তা বাড়িয়ে পঞ্চম শতাংশ করা হয়), বিধানসভা ও লোকসভায় ৩৩% আসন মহিলা সংরক্ষিত করার জন্য ২০০৮ সালে ১০৮ তম সংবিধান সংশোধনি বিল লোকসভায় পাস করানো হলেও তা রাজ্যসভায় গিয়ে আটকে যায় যা আজও হয়ে উঠেনি।
মহিলাদের সুরক্ষা ও ক্ষমতায়নের জন্য বহু আইন থাকা সত্ত্বেও কোথাও একটা জায়গায় গিয়ে মহিলারা আজও লাঞ্ছিত, বঞ্চিত, সুশীত, যা শুরু হয় তার নিজের ঘর থেকে, আজও বহু পরিবার তাদের ঘরের নারীদের সঠিক মর্যাদা দেয় না।
আমরা যদি প্রাচীন কাল থেকে নারীদের অবস্থান দেখতে যাই তবে তা খুব বেশি পরিবর্তন হয়েছে বলে বলা যায় না।
প্রাচীন যুগের নারীরা শিশু কন্যা হত্যা, পনপ্রথা, বাল্য বিবাহ, সতীদাহ প্রথার মত ঘটনার শিকার ছিলেন, তখন কার সময়ে ১২-১৪ বৎসরের মেয়েদের ৪০-৫০ বৎসর বয়স্কদের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হত, তাতে করে মেয়ের বয়স ৩০ হওয়ার আগেই মেয়ে বিধবা হয়ে যেত এবং তার চুল কেটে তাকে সাদা কাপড় পরিয়ে তাকে এক ঘরে করে দেওয়া হত, সে না পেত ভাল খাবার, কিছুই ছিলনা তার জীবনে।
সতীদাহ প্রথা যেখানে মেয়ের স্বামীর মৃত্যুতে মেয়েকেও তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে তার স্বামীর সঙ্গে চিতায় তুলে দেওয়া হত।
সমাজ সংস্কারক রাজা রাম মোহন রায়, ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর, দয়ানন্দ স্বরস্বতী ইত্যাদির মত মহাপুরুষেরা তখন এই ধরনের ঘটনার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ গড়ে ১৮২৯ সালে সতীদাহ প্রথা উচ্ছেদ আইন ও ১৮৫৬ সালে বিধবা বিবাহ আইন পাস করান।
বর্তমান সময়েও মেয়েদেরই হেসেল সামলাতে হয়, ছোট থেকেই মেয়েদের শেখানো হয় তুমি ডাক্তার হও কিংবা ইঞ্জিনিয়ার কাজ তোমাকে করতেই হবে, হেসেল তোমাকেই সামলাতে হবে।
কোথাও গেলে মেয়েদের ভাবতে হয় সমাজের কথা? আজও এই সমাজে মেয়েরা বাড়ির বাইরে থাকলে মা বাবা তার চিন্তায় ঘুমুতে পারেন না। কোথায় ছেলেদের বেলাত এই সব চিন্তা করতে হয় না।
বিয়ের পর সন্তান কে মানুষ করতে বহু মেয়েদের ছেড়েদিতে হয় চাকরি, আজ ও বহু মানুষ শিক্ষিত মেয়ে বিয়ে করে কেবল সন্তানদের শিক্ষিত করার জন্যে, বহু মা বাবা কেবল ভাল শিক্ষিত বরের আশায় তাদের মেয়েদের পড়াশোনা করান।
তবে কি আমরা বলতে পারি সমাজ বদলেছে, শিক্ষিত হয়েছে? আইনের ভয়ে খানিকটা বদলালে ও ভিতরে আজ ও বাসা বেঁধে আছে চিড়া চরিত প্রথা রীতি নীতি।
আজ মানুষ চাঁদে পৌঁছে গেছেন বিজ্ঞান উন্নতি করছে এই বিজ্ঞানের দুনিয়ায় ও মেয়েদের মাসিক সমস্যা হলে তাদের যেতে দাওয়া হয় না পূজা ঘরে কোন শুভ কাজে, তবে এ কোন শিক্ষিত সমাজ?
যেখানে নারী শক্তির আরাধনা করা হয় সেখানে দিন প্রতিদিন বেড়েই চলেছে মহিলা বিরুধী অপরাধের ঘটনা।
১লা জানুয়ারি ২০২২ এর এক রিপোর্ট অনুযায়ী ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে যা ২০২০ সালে ছিল ২৩,৭২২টি তা ২০২১ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ৩১,০০০। মহিলাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের প্রায় ৩১,০০০ অভিযোগ গত বছর জাতীয় মহিলা কমিশন (NCW) পেয়েছে, যা ২০১৪ সালের পর থেকে সর্বোচ্চ, যার অর্ধেকেরও বেশি ঘটনার অভিযোগ উত্তর প্রদেশ থেকে এসেছে।
মহিলাদের বিরুদ্ধে হওয়া অপরাধের মধ্যে রয়েছে বাল্য বিবাহ:- এখনো ভারতবর্ষে ৪৭% মেয়েদের ১৮ বৎসরের ও কম বয়সে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়, NCRB'র রিপোর্ট অনুসারে আমাদের দেশে প্রতি ৩মিনিটে একটি মহিলার বিরুদ্ধে অপরাধের ঘটনা ঘটে, প্রতি ২৯মিনিটে একটি মেয়ের সঙ্গে ধর্ষনের মত জঘন্যতম ঘটনা ঘটে, প্রতি ৭৭ মিনিটে পনের জন্য একটি মেয়ে প্রাণ হারান, এবং প্রতি ৯ মিনিটে কোন না কোন ভাবে মহিলার বিরুদ্ধে অপরাধের ঘটনা ঘটে থাকে, ৭০% ভারতীয় মহিলা গার্হস্থ্য সহিংসতার শিকার, প্রত্যেক মহিলা কোন না কোন সময় যৌন হয়রানির শিকার হয়েই থাকেন, এর মধ্যে রয়েছে কন্যা শিশু ভ্রূণ হত্যার মত ঘটনা এটি আইনগত দন্ডনীয় হওয়া সত্ত্বেও এখনো কোথাও কোথাও অনৈতিক ভাবে তা ঘটে থাকে, রয়েছে এসিড নিক্ষেপের মত ভয়ঙ্কর ও জঘন্য তম ঘটনা।
কেন সব কিছুর জন্য দোষারোপ করা হয় কেবল মেয়েদেরকে? তবে এ কিসের স্বাধীনতা, সত্যিই কি এই কুসংস্কারের বেড়াজাল থেকে স্বাধীন হয়েছে হতে পেরেছে আমাদের সমাজ? মেয়েরা কি পেয়েছে পূর্ন স্বাধীনতা? ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, রাজারাম মোহন রায় সহ প্রত্যেক মনীষীরা যারা প্রতিনিয়ত কুসংস্কার মুক্ত ভারত গড়ার স্বপ্ন দেখে লড়াই করে গেছেন তারা কি সফল হতে পেরেছে?
অনেকে ৩৬৫ দিনই নারী দিবস বলে থাকেন, কিন্তু ৩৬৫ দিন তো ছেড়ে দিন বৎসরের একটা দিন নারী দিবসের দিনও এইসব ঘটনার কোন বিকল্প ঘটে না। যে দেশে দেবী শক্তির আরাধনা হয়, সেই দেশে মানব দেবীর অপমান বেমানান। আসলেই কি নারী দিবস সফল হয়েছে?
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।
:- কাজী নজরুল ইসলাম
বছরের ৩৬৫ দিনের মধ্যে আলাদা করে নারীদের জন্যই শুধু একটা দিন। ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশে এই দিনটিকে বিশেষ ভাবে পালন করা হয়। আমাদের ভারতবর্ষে ও প্রতিবৎসর যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয় আন্তর্জাতিক নারী দিবস।
১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ নিউইয়র্ক শহরের একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা ন্যায্য মজুরি ও শ্রমের দাবিতে আন্দোলন করেন। আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল পুুরুষের সমান মজুরি এবং দৈনিক ৮ ঘণ্টা শ্রমের দাবি। এই আন্দোলনে পুলিশ নির্যাতন চালায় এবং অনেককে গ্রেপ্তার করে।
১৯০৯ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারি নিউইয়কে পোশাক শ্রমিক ইউনিয়নের নারীরা আরেকটি প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। ১৪ দিন ধরে এই প্রতিবাদ চলে এবং এতে প্রায় ২০ হাজার নারী শ্রমিক অংশগ্রহণ করেন। কর্মক্ষেত্রে অতিরিক্ত শ্রম এবং শিশুশ্রম বন্ধের দাবিতে তাঁরা এ আন্দোলন করেন। কর্মক্ষেত্রে এই আন্দোলন নারীদের ঐক্যবদ্ধতার একটি বড় উদাহরণ।
১৯১০ সালে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক সম্মেলনে জার্মান সমাজতাত্ত্বিক ক্লারা জেটকিন নারীর ভোটাধিকার এবং একটি নারী দিবস ঘোষণার দাবি জানান।
১৯১৭ সালে রাশিয়ায় নারীরা ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ রোববার নারী দিবস হিসেবে পালন করেন।
আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিসংঘ ১৯৭৫ সালের ৮ মার্চ দিনটিকে প্রথম আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। ১৯৭৭ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ সদস্য রাষ্ট্রদের নারী অধিকার ও বিশ্ব শান্তি রক্ষার জন্য জাতিসংঘ দিবস হিসাবে ৮ মার্চকে ঘোষণা করার আহ্বান জানায়।
১৯৭৯ সালের ডিসেম্বর মাসে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে এটি গৃহীত হয়। ১৯৮১ সালে ২০টি দেশ সমর্থন করার পর এটি কার্যকর হয়।
বহু সংগ্রামের পর পাওয়া এই নারী দিবস, সমগ্ৰ বিশ্বের সঙ্গে ভারতবর্ষে ও যথাযথা মর্যাদার সঙ্গে পালন করা হয়ে থাকে। প্রতিবৎসর নারী দিবস আলাদা আলাদা থিমে পালন করা হয়।
আমাদের ভারতবর্ষে স্বাধীনতার সঙ্গে সঙ্গেই নারীদের ভোটাধিকার দেওয়া হয়, যেখানে অন্যান্য দেশে ভোটাধিকারের জন্যও নারীদের অনেক লড়াই করতে হয়েছিল।
এখন মেয়েরা চাকরি করে, ব্যাবসা করে, রাজনীতি করে, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, উকিল, সব ক্ষেত্রে মেয়েরা ছেলেদের সমান। দেশ স্বাধীনের পর রচিত হয় সংবিধান, আমাদের ভারতীয় সংবিধানে ছেলে ও মেয়েকে সমান অধিকার দেওয়া হয়েছে।
আমাদের ভারতবর্ষে সর্ব কালীন শ্রেষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী ছিলেন একজন মহিলা শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী যিনি পাকিস্তানের ভূগোল পরিবর্তন করে দিয়েছিলেন।
এই দেশের বিভিন্ন রাজ্যে বহু মহিলা মুখ্যমন্ত্রী ও হয়েছেন। ভারতবর্ষে এমন অনেক মহিলারা আছেন যারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভাবে নারী শক্তির উদাহরণ কায়েম করেছেন যেমন সাবেত্রী বাই ফুলে, মাদার টেরিজা, আনি বেসান্ত, সরোজিনী নাইডু, আন্না চান্দী, বিজয় লক্ষী পন্ডিত, কিরণ বেদী, সুচেতা কৃপালিনী ইত্যাদি।
মহিলা দের সুরক্ষার জন্য, মহিলাদের সশক্তি করার জন্য মোট ৩৪ টি আইন রয়েছে, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী জি মহিলাদের সশক্তি করণের জন্য ৭৩ তম ও ৭৪ তম সংবিধান সংশোধনির মাধ্যমে পঞ্চায়েত, পৌরসভা ও পৌরনিগম নির্বাচনে এক তৃতীয়াংশ আসন মহিলা সংরক্ষিত করেন (পরবর্তী সময়ে তা বাড়িয়ে পঞ্চম শতাংশ করা হয়), বিধানসভা ও লোকসভায় ৩৩% আসন মহিলা সংরক্ষিত করার জন্য ২০০৮ সালে ১০৮ তম সংবিধান সংশোধনি বিল লোকসভায় পাস করানো হলেও তা রাজ্যসভায় গিয়ে আটকে যায় যা আজও হয়ে উঠেনি।
মহিলাদের সুরক্ষা ও ক্ষমতায়নের জন্য বহু আইন থাকা সত্ত্বেও কোথাও একটা জায়গায় গিয়ে মহিলারা আজও লাঞ্ছিত, বঞ্চিত, সুশীত, যা শুরু হয় তার নিজের ঘর থেকে, আজও বহু পরিবার তাদের ঘরের নারীদের সঠিক মর্যাদা দেয় না।
আমরা যদি প্রাচীন কাল থেকে নারীদের অবস্থান দেখতে যাই তবে তা খুব বেশি পরিবর্তন হয়েছে বলে বলা যায় না।
প্রাচীন যুগের নারীরা শিশু কন্যা হত্যা, পনপ্রথা, বাল্য বিবাহ, সতীদাহ প্রথার মত ঘটনার শিকার ছিলেন, তখন কার সময়ে ১২-১৪ বৎসরের মেয়েদের ৪০-৫০ বৎসর বয়স্কদের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হত, তাতে করে মেয়ের বয়স ৩০ হওয়ার আগেই মেয়ে বিধবা হয়ে যেত এবং তার চুল কেটে তাকে সাদা কাপড় পরিয়ে তাকে এক ঘরে করে দেওয়া হত, সে না পেত ভাল খাবার, কিছুই ছিলনা তার জীবনে।
সতীদাহ প্রথা যেখানে মেয়ের স্বামীর মৃত্যুতে মেয়েকেও তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে তার স্বামীর সঙ্গে চিতায় তুলে দেওয়া হত।
সমাজ সংস্কারক রাজা রাম মোহন রায়, ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর, দয়ানন্দ স্বরস্বতী ইত্যাদির মত মহাপুরুষেরা তখন এই ধরনের ঘটনার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ গড়ে ১৮২৯ সালে সতীদাহ প্রথা উচ্ছেদ আইন ও ১৮৫৬ সালে বিধবা বিবাহ আইন পাস করান।
বর্তমান সময়েও মেয়েদেরই হেসেল সামলাতে হয়, ছোট থেকেই মেয়েদের শেখানো হয় তুমি ডাক্তার হও কিংবা ইঞ্জিনিয়ার কাজ তোমাকে করতেই হবে, হেসেল তোমাকেই সামলাতে হবে।
কোথাও গেলে মেয়েদের ভাবতে হয় সমাজের কথা? আজও এই সমাজে মেয়েরা বাড়ির বাইরে থাকলে মা বাবা তার চিন্তায় ঘুমুতে পারেন না। কোথায় ছেলেদের বেলাত এই সব চিন্তা করতে হয় না।
বিয়ের পর সন্তান কে মানুষ করতে বহু মেয়েদের ছেড়েদিতে হয় চাকরি, আজ ও বহু মানুষ শিক্ষিত মেয়ে বিয়ে করে কেবল সন্তানদের শিক্ষিত করার জন্যে, বহু মা বাবা কেবল ভাল শিক্ষিত বরের আশায় তাদের মেয়েদের পড়াশোনা করান।
তবে কি আমরা বলতে পারি সমাজ বদলেছে, শিক্ষিত হয়েছে? আইনের ভয়ে খানিকটা বদলালে ও ভিতরে আজ ও বাসা বেঁধে আছে চিড়া চরিত প্রথা রীতি নীতি।
আজ মানুষ চাঁদে পৌঁছে গেছেন বিজ্ঞান উন্নতি করছে এই বিজ্ঞানের দুনিয়ায় ও মেয়েদের মাসিক সমস্যা হলে তাদের যেতে দাওয়া হয় না পূজা ঘরে কোন শুভ কাজে, তবে এ কোন শিক্ষিত সমাজ?
যেখানে নারী শক্তির আরাধনা করা হয় সেখানে দিন প্রতিদিন বেড়েই চলেছে মহিলা বিরুধী অপরাধের ঘটনা।
১লা জানুয়ারি ২০২২ এর এক রিপোর্ট অনুযায়ী ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে যা ২০২০ সালে ছিল ২৩,৭২২টি তা ২০২১ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ৩১,০০০। মহিলাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের প্রায় ৩১,০০০ অভিযোগ গত বছর জাতীয় মহিলা কমিশন (NCW) পেয়েছে, যা ২০১৪ সালের পর থেকে সর্বোচ্চ, যার অর্ধেকেরও বেশি ঘটনার অভিযোগ উত্তর প্রদেশ থেকে এসেছে।
মহিলাদের বিরুদ্ধে হওয়া অপরাধের মধ্যে রয়েছে বাল্য বিবাহ:- এখনো ভারতবর্ষে ৪৭% মেয়েদের ১৮ বৎসরের ও কম বয়সে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়, NCRB'র রিপোর্ট অনুসারে আমাদের দেশে প্রতি ৩মিনিটে একটি মহিলার বিরুদ্ধে অপরাধের ঘটনা ঘটে, প্রতি ২৯মিনিটে একটি মেয়ের সঙ্গে ধর্ষনের মত জঘন্যতম ঘটনা ঘটে, প্রতি ৭৭ মিনিটে পনের জন্য একটি মেয়ে প্রাণ হারান, এবং প্রতি ৯ মিনিটে কোন না কোন ভাবে মহিলার বিরুদ্ধে অপরাধের ঘটনা ঘটে থাকে, ৭০% ভারতীয় মহিলা গার্হস্থ্য সহিংসতার শিকার, প্রত্যেক মহিলা কোন না কোন সময় যৌন হয়রানির শিকার হয়েই থাকেন, এর মধ্যে রয়েছে কন্যা শিশু ভ্রূণ হত্যার মত ঘটনা এটি আইনগত দন্ডনীয় হওয়া সত্ত্বেও এখনো কোথাও কোথাও অনৈতিক ভাবে তা ঘটে থাকে, রয়েছে এসিড নিক্ষেপের মত ভয়ঙ্কর ও জঘন্য তম ঘটনা।
কেন সব কিছুর জন্য দোষারোপ করা হয় কেবল মেয়েদেরকে? তবে এ কিসের স্বাধীনতা, সত্যিই কি এই কুসংস্কারের বেড়াজাল থেকে স্বাধীন হয়েছে হতে পেরেছে আমাদের সমাজ? মেয়েরা কি পেয়েছে পূর্ন স্বাধীনতা? ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, রাজারাম মোহন রায় সহ প্রত্যেক মনীষীরা যারা প্রতিনিয়ত কুসংস্কার মুক্ত ভারত গড়ার স্বপ্ন দেখে লড়াই করে গেছেন তারা কি সফল হতে পেরেছে?
অনেকে ৩৬৫ দিনই নারী দিবস বলে থাকেন, কিন্তু ৩৬৫ দিন তো ছেড়ে দিন বৎসরের একটা দিন নারী দিবসের দিনও এইসব ঘটনার কোন বিকল্প ঘটে না। যে দেশে দেবী শক্তির আরাধনা হয়, সেই দেশে মানব দেবীর অপমান বেমানান। আসলেই কি নারী দিবস সফল হয়েছে?
পুরুষতান্ত্রিক সমাজ তাই...
পুরুষকে বড় করে।
জেনে রেখো সেই পুরুষকেই,
নারী'... গর্ভে ধারণ করে।
Comments
Post a Comment