কালো আইনে কালো কী আছে!

সম্প্রতি লোকসভায় কৃষি আইনের উপর চর্চা চলাকালীন, ভারতের কৃষিমন্ত্রী বিরুধিদের প্রশ্ন করেন কালে কানুন মে কালা কিয়া হে”? উনি বলেন উনি নাকি কৃষকদের ডেকে ও একি প্রশ্ন করেছিলেন কিন্তু কেউ এর উত্তর দিতে পারেন নি, এটা নিয়ে বর্তমান সর্ব ভারতীয় ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে উত্তাল, কিন্তু বিরুধী নেতারা ও কৃষকেরা কেন এই আইন প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছে তা দেখানো হচ্ছে না, এই প্রশ্নটি অনেকের মনেই উঠতে পারে তাই এর জবাব দেওয়ার একটি ছোট্ট প্রয়াস

কিছু মাস আগে ভারতের সংসদের উভয় কক্ষেই কোন প্রকার তর্ক বিতর্ক, বিরোধীদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা ছাড়াই তিনটি কৃষি আইন পাশ করানো হয়।

 

এই তিনটি আইনের নাম হল:-

) The Farmers produce Trade and commerce (Promotion and Facilitation) Act, 2020

) Farmers (Empowerment and Protection) Agreement on Price Assurance and Farm Services Act, 2020

) The Essential Commodities (Amendment) Act 2020

এই তিনটি আইনের বিরুদ্ধে সবচাইতে বেশি আন্দোলন হচ্ছে পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও উত্তরপ্রদেশে তাছাড়াও কর্ণাটক, পশ্চিমবঙ্গ সহ সকল ছোট বড় রাজ্যের চলছে বিরোধ, এমনকি বিজেপি ও

RSS এর যে সহযোগি ভারতীয় কৃষক সংজ্ঞ (BSK) ও এই আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান, তবে তারা প্রতিবাদে পথে নামেননী।

কী আছে এই তিনটি আইনে এবং কেন এই আইনের বিরোধিতা হচ্ছে :-

) The Farmers produce Trade and commerce (Promotion and Facilitation) Act, 2020

এই আইনে দুটি মোল বিষয়ের কথা বলা হয়েছে।

প্রথমত

এই আইনে বলা হয়েছে কৃষকরা দেশের যে কোন রাজ্যে গিয়ে তার কৃষিজ দ্রব্যাদি বিক্রি করতে পারে,

এবং দ্বিতীয়টি

Private মন্ডি প্রতিষ্ঠিত করা যেতে পারে।

Private মন্ডি কী এটা বলতে গেলে প্রথমে বলতে হবে, কৃষকদের জন্য বর্তমানে কী সিস্টেম রয়েছে আগে এটা বোঝতে হবে।

1950 সালে APMC স্থাপন করা হয় যাকে কৃষিমন্ডি ও বলা হয়, সারা ভারতবর্ষে মূলত ৭০০০ টি APMC আছে।

APMC হল এমন একটি বাজার যেখানে কৃষকেরা তাদের নিজেদের কৃষিজ দ্রব্যাদি সঠিক মূল্যে বিক্রিকরে থাকেন, APMC তে থেকে সরকারি লাইসেন্স যুক্ত কিছু মাঝারি লোক যারা কৃষকদের থেকে তাদের দ্রব্যাদি কিনে, এবং তা দোকানদার ও বড় ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রিকরে দেন।

এই আইনের ফলে পরিবর্তন কী হবে

এই আইনের ফলে কৃষক ও বড় ব্যবসায়ীদের মধ্যে কোন মাঝারি লোক থাকবে না, গতবারের গেহুর MSP ছিল ১৯২৫ টাকা, কিন্তু এখন এটা private মন্ডি হওয়ার ফলে এতে কোন MSP থাকবে না,

এর কোফল :-

Private মন্ডি হওয়ার হলে, APMC আর থাকবে ফলে, APMC না থাকলে কৃষকদের কাছে বেসরকারি সংস্থা কাছে দ্রব্যাদি বিক্রি করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না, ফলে কিছু বছর পর যদি বেসরকারি সংস্থা বলে আমি গেহু ১৫০০ টাকা প্রতি কোইন্টাল কিনব তখন কৃষকদের কাছে তাদের কথা মানা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না,

কারণ আমাদের ভারতের ৮৫% কৃষকদের কাছে কৃষিকাজ করার জন্য জমিন রয়েছে ২ হেক্টর থেকে ও কম এর ফলে এনাদের বলা হয় small land holding, ফলে তাদের ফসল উৎপাদন ও কম তাই তারা সাধারণত বড় কোম্পানির সঙ্গে দরাদড়ি ও করতে পারবেন না।

এই ক্ষেত্রে হয় কৃষকদের বেসরকারি সংস্থার কথা মেনে দ্রব্যাদি বিক্রি করতে হবে নতুবা আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হবে, যা আমরা দেখে আসছি।

তাছাড়া এখানে সরকার একটা বিষয়নিয়ে খুব বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন যা হল এই আইনে কোন বাধ্য বাধকতা নেই যার ফলে কৃষক যে কোন রাজ্যে গিয়ে তাদের ফসল বিক্রি করতে পারে

প্রথমত আগে ও কোন বাধ্যবাধকতা ছিল না, এই ক্ষেত্রে যদি কৃষকরা অন্য কোন রাজ্যে তাদের ফসল বিক্রি করতে যায়, তাদের পরিবহনের খরচা সেখানে যদি ফসল বিক্রি না হয়, তা আবার ফিরিয়ে এনে স্টক করে রাখার খরচা, যাতে করে কৃষকদের ক্ষতি ছাড়া লাভ হবেনা।

এবং এর ফলে বহু লোক নিজের চাকরি নিজেদের কাজ হারাবেন, APMC না থাকলে সরকারি লাইসেন্স যুক্ত কিছু মাঝারি লোকেরা নিজেদের কাজ হারাবেন, APMC তে যারা হিসেবের কাজ করত, যারা মাল তোলার কাজ করে এর ফলে তাদের কাজের উপর ও প্রভাব পড়বে।

) Farmers (Empowerment and Protection) Agreement on Price Assurance and Farm Services Act, 2020

একে contract farming ও বলা যেতে পারে, কারণ এখানে কৃষকদের সঙ্গে contract এর বিষয়ে কথা বলা হয়েছে।

 

ধরে নেওয়া যাক এখানে কোন একজন কৃষক ধান চাষ করছে তার ধান কাটার আগেই বেসরকারি সংস্থা কৃষকের সঙ্গে চুক্তি করে নেবেন যে আমরা ১৮০০ টাকা কোইন্টাল ধান তোমার থেকে কিনব।

এর কোফল:-

এখানে যদি APMC আর না থাকে সেই ক্ষেত্রে কিছু বছর পরে যে সেই বেসরকারি সংস্থা গুলি নিজের মনের মত দাম কৃষকদের উপরে চাপিয়ে দেবেন না এর কী গ্যারান্টি আছে।

উদাহরণ:- Online Shopping আপ গুলি যখন প্রথম প্রথম চালো হয়েছিল, সাধারণ মানুষের জন্য অনেক ভাল ভাল অফার ছিল কিন্তু কিছু বৎসর পর দেখা যায়, অফার কমে গেছে, ডেলিভারি চার্জ বেড়ে গেছে। একই ঘটনা যে এই ক্ষেত্রে ঘটবে না তার কোন মানে নাই।

এই উদাহরণ টি একটি খুবই সাধারণ উদাহরণ কিন্তু কৃষকদের ক্ষেত্রে এটা তাদের জীবনের বিষয়।

এখানে কৃষকদের দাবি সরকার যেন MSP না সড়ায়, সরকার ও কথা দিয়েছে যে MSP থাকবে, কিন্তু এখানে চিন্তার বিষয় হল বেসরকারি চুক্তির ক্ষেত্রে সরকার কোন হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।

সরকার তা করবেন না, যদি সরকার তা করে তবে এটা পুনরায় APMC হয়ে যাবে, এই ক্ষেত্রে বেসরকারি কী থাকবে।

) The Essential Commodities (Amendment) Act 2020

এই আইনে hoading এর কথা বলা হয়েছে, hoading এর অর্থ হল স্টক করে রাখা।

আগেকার দিনে দেখা যেত, জমিদাররা ফসল স্টক করে রেখে দিত, এবং প্রয়োজনের সময় তা দ্বিগুণ দামে বিক্রি করত,

সরকার মাঝে তা স্টক করে রাখা আইন জারি করে নিষিদ্ধ করেন, কিন্তু এই আইনে তার কথা পুনরায় উল্লেখ করা হয়েছে।

এই আইনে বলা হয়েছে আপনি যত খুশি মাল স্টক করতে পারেন। এই ক্ষেত্রে কৃষকদের ভয় হল, এর ফলে স্টক করা ফসলের দাম দ্বিগুন বৃদ্ধি পেতে পারে।

এর কোফল :-

এই আইনের ফলে বেসরকারি সংস্থা কম দামে ফসল কিনে তা স্টক করে রাখতে পারেন, এবং পরের বছর ফসল কিনার সময় তারা কৃষকদের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে কম দামে ফসল বিক্রি করার জন্য, সেই ক্ষেত্রে কৃষকদের কোন কিছু করার থাকবে না।

এখানে কৃষকদের যে অভিযোগ হল এই তিনটি আইনই আনা হয়েছে বেসরকারি সংস্থাদের পক্ষে, এখানে সরকার চাইলে কৃষকদের importance দিতে পারত, এই আইন গুলিতে MSP যুক্ত করতে পারত।

তাছাড়া তাদের আর একটি অভিযোগ হল, এখানে যে বলা হচ্ছে মাঝারি কোন ব্যক্তি থাকবে না! কোন বেসরকারি সংস্থা চুক্তি করতে এলে প্রথম কাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবে কারণ তারা ও সকলকে চিনে না, সেই ক্ষেত্রে তারা নিশ্চয় কোন মাঝারি ব্যাক্তি কে কাজে লাগাবেন, এতে কোন পার্থক্য ই থাকবে না।

এই সম্পূর্ণ বিষয়ের একটি সাধারণ উদাহরণ :-

Jio কোম্পানি যখন প্রথম ভারতে ব্যবসা শুরু করেন তখন তারা ফ্রী'তে সিম কার্ড ও ইন্টারনেট দিতেন, কিন্তু কিছু সময় পরেই দেখা যায় তারা ইন্টারনেটের দাম বাড়াতে থাকে, এখন এমুন একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, ভারতের মার্কেটে রয়েছে শুধু মাত্র ৩-৪ টি নেটওয়ার্ক কোম্পানি, এখন যদি তারা সবাই মিলে ঠিক করেন তারা 1 GB নেট ৫০০ টাকায় দেবেন তখন আমাদের কাছে করার মত কিছুই থাকবে না।

এই তিনটি আইনের অবস্থা ও ঠিক একই রকম। 


Comments

Popular posts from this blog

Ami Hindu / আমি হিন্দু

জালিয়ানওয়ালাবাগ

যুক্তিতে ভক্তি