ইন্দিরা প্রিয়দর্শিনী



এক নজরে বিশ্ব নেতৃ ইন্দিরা গান্ধী

বিশ্ব রাজনীতিতে শক্তির প্রতীক ইন্দিরা গান্ধী ।
সমস্যার সামনে হার না মানার ইন্দিরা গান্ধী ।
রাজনৈতিক জীবনে “Iron lady” ইন্দিরা গান্ধী
বাচ্চাদের মাঝে ছোট্ট বেলায় ফিরে যাওয়ার ইন্দিরা গান্ধী
আমেরিকাকে দিনের বেলায় তারা দেখিয়ে দেওয়ার ইন্দিরা গান্ধী
এক নতুন ভারতের ভাগ্য লেখার ইন্দিরা গান্ধী
দেশের জন্য নিজের রক্ত বইয়ে দেওয়ার ইন্দিরা গান্ধী

পিতা জওহরলাল নেহরু। মাতা কমলা নেহরুর একমাত্র কন্যা ভারতমাতা প্রিয়দর্শিনী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী। জওহরলাল নেহরুর পিতা মতিলাল নেহরু তখন এলাহাবাদের নামজাদা উকিল ও জননেতা ছিলেন। এলাহাবাদের আনন্দ ভবনে প্রিয়দর্শিনী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর জন্ম হয় ১৯/১১/১৯১৭ সালে।

এক মহান পরিবারের মেয়ে হওয়া সত্ত্বেও জীবনে খুব লড়াই করে এগিয়ে যেতে হয়েছিল শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীকে। ছোটবেলা থেকেই প্রায় নিঃসঙ্গতায় ভুগতে হয়েছিল শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীকে। মা কমলা নেহরু সারা বছরই প্রায় অসুস্থতায় ভুগতেন। পিতা জওহরলাল নেহরু বেশির ভাগ সময়ই স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকতেন নতুবা ব্রিটিশ শাসনের দ্বারা জেল বন্ধী থাকতেন। শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী সারা দিন বাড়িতে একাই থাকতেন। ছোটবেলা থেকেই ইন্দিরা গান্ধী যুক্ত ছিলেন রাজনীতির সঙ্গে। বাড়ির একমাত্র মেয়ে বলে সবাই তাকে খুব ভালোবাসতেন তা সত্ত্বেও তিনি খুব নিঃসঙ্গতায় ভুগতেন। জওহরলাল নেহরুর স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রভাব মেয়ে ইন্দিরার উপর ও পড়েছিল। ইন্দিরা গান্ধী শৈশবে কখনও পুতুল দিয়ে খেলেননি। শৈশবে তিনি ছোটদের নিয়ে একটা বানরসেনা গঠন করেছিলেন। কিন্তু পণ্ডিত নেহরুর চিন্তা ছিল তার মেয়ের পড়াশুনা নিয়ে। তিনি ইন্দিরা গান্ধী কে পুনের এক বোর্ডিং স্কুলে পাঠিয়ে দেন।  এর ঠিক তিন বছর পর ১৯৩৪ ইংরেজি ইন্দিরা গান্ধী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত শান্তিনিকেতনে পড়তে চলে যান। তখনই জজ্ঞা রোগে আক্রান্ত কমলা নেহরু কে চিকিৎসার জন্য পণ্ডিত নেহরু সুইজারল্যান্ড নিয়ে যান। অবশেষে ২৮/০২/১৯৩৬ ইং কমলা নেহরু সুইজারল্যান্ডে তাঁর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। শেষ সময়ে ইন্দিরা গান্ধী তার মায়ের মুখখানি ও দেখতে পাননি। ইন্দিরা গান্ধী দুঃখে কষ্টে ছট ফট করছিলেন। কিন্তু জীবনের এই দুঃখ কষ্ট গুলিই তাকে আর দৃঢ় করে তুলেছিল জীবনের পথে এগিয়ে যেতে। ১৯৩৬ সালে ইন্দিরা গান্ধী তার উচ্চশিক্ষার জন্য “Oxford University” তে পড়তে চলে যান তখন পণ্ডিত নেহরু ও ইন্দিরা গান্ধীর মধ্যে কথা বার্তা হতো চিঠির মাধ্যমে। বাবার চিঠি শুধুমাত্র ইন্দিরা গান্ধী কে ভারত সম্পর্কে জানাননি। তাকে ভেতর থেকে একদম শক্ত করে তুলেছিল, যা নাকি ‘Letter to her daughter/ Nehru letter’ নামে পরিচিত ১৯৪১ সালে Oxford থেকে পড়া শেষ করে ভারতে ফিরে আসেন মেয়ের দেশে ফিরে আসাতে নেহেরু খুবই খুশি ছিলেন। কিন্তু তখনি ইন্দিরা গান্ধী তাঁকে একটি কথা জানান যা শুনে তিনি খুব চমকে গেলেন। যে ফিরোজ গান্ধী অসুস্থ কমলা নেহরুর সেবা করেছিলেন যে ফিরোজ তার School of Economics এর পড়া শেষ না করেই স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন সেই ফিরোজ গান্ধী কে ইন্দিরা গান্ধী নিজের জীবন সঙ্গি হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন ফিরোজ গান্ধী ও ইন্দিরা গান্ধীর দেখা হয় লন্ডনে থাকাকালীন সময়ে, এবং সেখানেই তারা একজন আরএকজনকে পছন্দ করতে লাগলেন কিন্তু ফিরোজ গান্ধীর সাহস হচ্ছিলনা নেহরুকে তাদের ভালোবাসার কথা জানানোর। শেষে ইন্দিরা গান্ধী নিজেই তার পিতাকে তাদের ভালোবাসার কথা জানান এবং বলেন তিনি ফিরোজ গান্ধী কে বিয়ে করতে চান। তার কথা শুনে নেহরু খুবই রেগে গিয়েছিলেন এবং এনিয়ে তাঁদের বাড়িতে খুব মনোমালিন্য হয়। কারণ নেহরু ছিলেন কাশ্মীরি ব্রাহ্মণ এবং ফিরোজ গান্ধী ছিলেন পার্সি। অবশেষে বাধ্য হয়ে নেহরু বলেন যদি গান্ধীজি এই বিয়ের জন্য রাজি হন তবেই এই বিয়ে সম্ভব। প্রথমে গান্ধীজি একদমই রাজি ছিলেননা। পরে অনেক যুক্তির পর তিনি বিয়ের জন্য মতামত দেন। পণ্ডিত নেহরু চাননি যে ইন্দিরা গান্ধী এত তারাতারি বিয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহন করুক। গান্ধীজি ও তাকে এই কথাই বুঝিয়ে ছিলেন। কিন্তু ইন্দিরা গান্ধী একদম দেরি করতে চাননি।

অবশেষে ২৬/০৩/১৯৪২ ইংরেজি ফিরোজ গান্ধী ও ইন্দিরা গান্ধীর বিয়ে হয়। নেহরুর নিজ বাড়ি আনন্দ ভবনেই ফিরোজ গান্ধী ও ইন্দিরা গান্ধীর বিয়ে হয়। বিয়েতে ইন্দিরা যে গুলাপি রং এর শাড়িটি পড়েছিলেন সেটি পণ্ডিত নেহরু জেলে বসে নিজের হাতে তৈরি করেছিলেন। সেই শাড়িতে ইন্দিরা গান্ধীকে খুবই সুন্দর লাগছিল। ফিরোজ গান্ধী ধুতি, পাঞ্জাবী, ও গান্ধী টুপি পরে ছিলেনএই বিয়ের পরেই ইন্দিরা নেহরু হয়েছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। পণ্ডিত নেহরুই কন্যাদান করেন। যখন মেয়ের বিদায়ের সময় এল তখন নেহরু ভীষণ আবেগপ্রবন হয়ে পড়েছিলেন। তিনি মেয়ে ইন্দিরাকে জড়িয়ে ধরে ছিলেন। বিয়ের পরই ইন্দিরা গান্ধী ও ফিরোজ গান্ধী কে মধুচন্দ্রিমায় চলে যান কাশ্মীরে। কাশ্মীর থেকে ফিরলেই সদ্য বিবাহিত স্বামী – স্ত্রী কে ধরে নিয়ে জেলে বন্ধিকরে রাখেন ব্রিটিশ সেনারা। ১৩ মাস অর্থাৎ ১ বৎসরের ও বেশি সময় জেলে বন্ধী রাখা হয় ফিরোজ গান্ধী ও ইন্দিরা গান্ধী কে।
২২/০৮/১৯৪৪ ইংরেজি রাজীব গান্ধীর জন্মের সঙ্গে বেড়ে ওঠে ইন্দিরা গান্ধীর পরিবার। এর ঠিক ২ বছর পর, ১৪/১২/১৯৪৬ ইংরেজি সঞ্জয় গান্ধীর জন্মের পরই ইন্দিরা গান্ধীর পরিবার সম্পূর্ণ হয়ে যায়। পণ্ডিত নেহরু রাজীব ও সঞ্জয় এর আগমনে খুবই খুশি ছিলেন তিনি দুটি খেলনা পেয়েছিলেন।

১৫ অগাস্ট, ১৯৪৭ সময়ছিল দেশ স্বাধীনের। মধ্যরাতে পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু ভাষণ দিয়ে স্বাধীনতার ঘোষণা করেন। পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হলেন।

কিন্তু ইন্দিরা গান্ধী দুভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েন। ফিরোজ গান্ধী লখনউতে “National Herald” এর এডিটর পদে নিযুক্ত হন এবং ইন্দিরা গান্ধী ও লখনউ চলে আসেন। কিন্তু দিল্লি তার পিতার কাছে আসা যাওয়া তার লেগেই থাকতো। এনিয়ে ফিরোজ গান্ধী ও ইদিরা গান্ধীর মধ্যে খুব অশান্তি হতো। কিন্তু এক্ষেত্রে ইন্দিরা গান্ধী খুবই অসহায় ছিলেন স্বামীর প্রতি যেমন তার কর্তব্য ছিল ঠিক সেরকমই তার পিতার প্রতিও তার সমান কর্তব্য ছিল। কোনটাই ছাড়া তার পক্ষে সম্ভব ছিল না। শুধু ইন্দিরা গান্ধী বলে কেন কোন মেয়ের পক্ষেই হয়ত এটা সম্ভব নয়। ১৯৫২ সালের লোকসভা নির্বাচনে পণ্ডিত নেহরু ফিরোজ গান্ধী কে রাইবারেলি থেকে টিকিট দেন এবং তিনি জিতেও যান।

পণ্ডিত নেহরুর ইচ্ছা ছিল ফিরোজ গান্ধী ও ইন্দিরা গান্ধী যেন তার সঙ্গে দিল্লি থেকে যান। কিন্তু ফিরোজ ঘর জামাই হতে মোটেও রাজি ছিলেননা। ইন্দিরা গান্ধী স্বামী ও পিতা দুজনের মধ্যে সমানভাবে চলার চেষ্টা করতে থাকেন। রাজীব ও সঞ্জয় গান্ধীকে ফিরোজ গান্ধীর পছন্দের স্কুলে ভর্তি করা হয়।

ইন্দিরা গান্ধী তখন সক্রিয় রাজনীতিতে নেমে পড়েছিলেন, ১৯৫৯ সালে প্রথমবার নির্বাচনে জয়ী হয়ে তিনি কংগ্রেসের সভানেত্রী হয়েছিলেন। তখন ইন্দিরা গান্ধীর অগ্নিপরীক্ষার সময় ছিল। স্বামী তার থেকে অনেক দূরে চলে গিয়েছিলেন, ফিরোজ গান্ধী ইন্দিরা গান্ধী কে স্পষ্ট বলে দিয়েছিলেন যে পিতা অথবা স্বামীর মধ্যে একজনকে বেছে নিতে। ইন্দিরা গান্ধী অসহায় হয়ে পড়েছিলেন। না তিনি অসুস্থ একা পিতাকে ছাড়তে পারবেন না স্বামীকে। ইন্দিরা গান্ধী খুব বিরক্ত হয়ে পড়েছিলেন লোকসভায় ও তিনি খুব দৃঢ় ভাবে কথা বলতেন। ফিরোজ গান্ধী তার ছেলে রাজীব ও সঞ্জয় থেকে দূরে চলে যাচ্ছিলেন। এরি মধ্যে ফিরোজ গান্ধীর প্রথন Heart Attack হয়, স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক করার জন্য ইন্দিরা গান্ধী পরিবার সহ ফিরোজ গান্ধী কে নিয়ে কাশ্মীরে চলে যান। কাশ্মীর থেকে ফিরলে সব ঠিক হয়ে যেতে থাকে। কিন্তু ইদিরা গান্ধীর ভাগ্যে তা ছিল না। ৮/০৯/১৯৬০ ইংরেজি ফিরোজ গান্ধীর তৃতীয় বারের মতো Heart Attack হয় এবং তাঁর মৃত্যু হয়ে যায়। মাত্র ৪৩ বছর বয়সে ইন্দিরা গান্ধী বিধবা হয়ে যান। স্বামী হারানোর দুঃখ ভোলার আগেই ২৭ মে ১৯৬৪ সালে ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু তাঁর শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর মৃত্যুর পর ইন্দিরা পাথর হয়ে যায়। তখন ইন্দিরা গান্ধীর দুই ছেলে রাজীব ও সঞ্জয়ই ছিল তাঁর সবকিছু, ইন্দিরা গান্ধী তাঁর দুইছেলেকে খুব ভালোবাসতেন। পিতা পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর মৃত্যুর পর দুঃখী ইন্দিরা গান্ধী কে বোঝান তৎকালীন নতুন প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রী। তখন ইন্দিরা গান্ধীর অবস্থা খুব একটা ভালোছিল না, ৮ বছরের মধ্যে পিতা ও স্বামীকে হারিয়ে খুবই ভেঙ্গে পড়েছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী কে তাঁর ক্যাবিনেটের তথ্য সম্প্রশ্বারন মন্ত্রীর দায়িত্ব অর্পণ করেন। ১১/০১/১৯৬৬ ইংরেজি লালবাহাদুর শাস্ত্রীর মৃত্যু হয়। গুলজারিলাল নন্দা তখন সাময়িক প্রধানমন্ত্রী হন। কিন্তু সে সময় কংগ্রেস সভাপতি কে. কামারাজ পার্টির মধ্যে বিরুধ থাকা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রীর জন্য ইন্দিরা গান্ধীর নাম পাঠিয়ে দেন





নতুন অধ্যায় প্রধানমন্ত্রী

২৪ জানুয়ারী, ১৯৬৬ ইংরেজি ইন্দিরা গান্ধী ভারতের প্রথন মহিলা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহন করেন

ইন্দিরা গান্ধী যখন প্রধানমন্ত্রী হলেন তখন তাঁর বিরোধীরাও ঠিক করে নেন যেন – তেন প্রকারে তাকে হামলা করতেই হবে। এমুন কী তাকে “গুঙ্গি গুরিয়া” ও বলা হয়েছিল কিন্তু তিনি কাজের মাধ্যমে “গুঙ্গি গুরিয়া” থেকে Iron Lady” হয়ে উঠেছিলেন

ইন্দিরা গান্ধী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর পার্টির ভিতরে বিরুধ শুরু হয়ে গেল মুরারজি দেশাই এই সিদ্ধান্তের প্রবল বিরুধিতা করেন মুরারজি দেশাই ও ইন্দিরা গান্ধীর মধ্যে মত বিরুধ সবসময় লেগে থাকতো। ইন্দিরা গান্ধী এই বিরুধ বন্ধ করার জন্য মুরারজি দেশাই কে উপপ্রধানমন্ত্রী বানিয়ে ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী হয়েও ইন্দিরা গান্ধী সর্বক্ষণ ভাষণ ও বিরুধ থেকে বাঁচার চেষ্টা করতেন। ইন্দিরা গান্ধী খুবই কম কথা বলতেন। ১৯৬৯ সালে ইন্দিরা গান্ধীর বাজেট প্রস্তুত করার কথা ছিল তখন ইন্দিরা গান্ধী এত ভয়ে ছিলেন যে তাঁর মুখ দিয়ে কথাই বেরুচ্ছিলনা। ইন্দিরা গান্ধীর নিজস্ব ডাক্তার ডঃ কে. পি. মাথুর তাঁর বই “The Unseen Indira” তে বলেছেন যেপ্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর ইন্দিরা দু-তিন বৎসর খুবই চাপের মধ্যে ছিলেন। যে অনুষ্ঠান গুলিতে তাকে বলতে হত সেখানে তিনি খুব অস্বস্থি বোধ করতেন।

ইন্দিরা গান্ধীর এই দুর্বলতার ফলে বিরোধীদের কাছ থেকে তাঁর সব সময় কথা শুনতে হত। রাম মনোহর লোহিয়া ইন্দিরা গান্ধী কে গুঙ্গি গুড়িয়া বলেছিলেন। তখন ইন্দিরা গান্ধী দু’দুটি সংগ্রাম একসঙ্গে লড়ছিলেন। বিরোধীদের কূট কথা থেকে তিনি যে ভাবেই হোক বেঁচে যাচ্ছিলেন। কিন্তু পার্টির ভেতরের লড়াই ইন্দিরা গান্ধী কে খুব বিপাকে ফেলেছিলেন।

এর মধ্যে ইন্দিরা গান্ধী অনেক বড় বড় সিধান্ত গ্রহণ করেছিলেন যেমন –

1.     ১৯ জুলাই ১৯৬৯ সালে ১৪ টি ব্যাংকের রাষ্ট্রিয় করন করিয়েছিলেন শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী। সাধারন জনতা ও কৃষকদের কাছে পৌঁছে দিয়েছিলেন বেঙ্কিং পরিষেবা।
2.     ভূমিহীন ও দুর্বলদের জন্য ভূমিসংস্কার নীতি চালু করে ছিলেন শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী।
3.     ‘সবুজবিপ্লব’ কে সমর্থন করেন শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী এর ফলে আগে যেখানে বাইরে থেকে খাদ্য কিনে আনতে হত ভারতকে সেখানে নিজেই খাদ্য উৎপাদন করতে শুরু করলো।

পার্টির ভেতরের বিরুধের ফলে ১৯৬৯ সালে কংগ্রেস দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পরে।
 কে. কামারাজ ও মোরারজি দেশাই কংগ্রেস (O) গঠন করেন ও ইন্দিরা গান্ধী কংগ্রেস (R) গঠন করেন

আগে যেখানে কংগ্রেসের প্রতীক ছিল দুটি গাভী সেই প্রতীকটি নির্বাচন কমিশন নিয়েনেন
সেখানে কংগ্রেস (O) এর প্রতীক হয় চরখা ও ইন্দিরা গান্ধীর কংগ্রেস (R) এর প্রতীক হয় গাই বাছুর
১৯৭১ এর নির্বাচনে ইন্দিরা গান্ধী গরিবী হটাও এর শ্লোগান দেন। প্রচারের সময় ইন্দিরা গান্ধী ৩৬ হাজার কিলোমিটার দূরত্ব ঠিক করেন, এবং ৩০০ সভা করেন। সেই নির্বাচনে কংগ্রেস (R) ৩৫২ সিট জিতেছিলেন এবং কংগ্রেস (O) মাত্র ১৬ সিট জিতেন।

ইন্দিরা গান্ধী খুব ভাবনা চিন্তা করে সিধান্ত গ্রহন করতেন। এবং তিনি সত্য বলতে কোনদিন ভয় পেতেন না।

১৯৭১ ইন্দিরা গান্ধী যখন আমেরিকা গেলেন তখন আমেরিকার রাষ্ট্রপতি নিকসন তাকে ৪৫ মিনিট অপেক্ষা করিয়েছিলেন কিন্তু ইন্দিরা গান্ধী তা ভুলেযাননি যখন আমেরিকার রাষ্ট্রপতি নিকসন তাঁর সন্মানে খাবারের আয়োজন করেছিলেন, তখন ইন্দিরা গান্ধী একদম নিকসন এর পাশে বসেছিলেন কিন্তু না তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন না তাঁর দিকে তাকিয়েছেন

১৯৭১ ইন্দিরা গান্ধী আমারিকা থেকে ফিরে, আমারিকাকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য রাশিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্ব করেন এবং দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়, চুক্তি অনুযায়ী দুই দেশ পরস্পরের সুরক্ষার দায়িত্ব গ্রহন করেন

আমেরিকার প্রাক্তন বিদেশ মন্ত্রী ‘Henry Kissinger’ তাঁর বই ‘White House Years’ এ লিখেছেন- যখন ইন্দিরা গান্ধী আমেরিকার রাষ্ট্রপতি নিকসনের সঙ্গে দেখা করেছিলেন, তখন তিনি এমন আচরণ করেছিলেন যেমন কোন শিক্ষক তাঁর দুর্বল ছাত্রের সঙ্গে করেন

১৯৭১ পশ্চিম পাকিস্তান পূর্ব পাকিস্তান সম্পর্কে তাঁর অগ্রাসন তীব্রতর করেছিল তখন পূর্ব পাকিস্থান থেকে লোক ভারতে আসতে লাগলেন পাকিস্তানের অত্যাচার দিন দিন তিব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠল পূর্ব পাকিস্তানের শেখ মুজিবুর রহমানকে বন্ধী করে রেখেছিলেন পাকিস্তানি সেনারা

ইন্দিরা গান্ধী পাকিস্তানী সেনাদের বার বার সতর্ক করেছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনী যোদ্ধের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত ছিলেন, /১২/১৯৭১ ইন্দিরা গান্ধী কলকাতায় এক জনসভা করেন, সেই দিন বিকেলে পাকিস্তানী বায়ুসেনা ভারতের সীমানা পেরিয়ে পাঠানকোট, শ্রীনগর, জোধপুর, ও আগরার বমানবন্দরে বোমাবাজি করেন খবর পেয়ে ইন্দিরা গান্ধী সোজা ম্যাপরুমে চলে যান সেখানে তাঁকে অবস্থার বর্ণনা দেওয়া হয় তখন ঘড়িতে রাত ১১ টা সেন প্রধানদের সঙ্গে দেখা করার পর, ইন্দিরা গান্ধী ক্যাবিনেট মিটিং ডাকেন, বিরুধি দলনেতা দের সঙ্গে দেখা করেন তাঁদেরকে ও পরিস্থিতি সম্পর্কে জানান, মধ্য রাতে ইন্দিরা গান্ধী সর্ব ভারতীয় রেডিওর মাধ্যমে দেশ বাসীর উদ্দেশ্যে বলেন

ইন্দিরা গান্ধী কিছুক্ষণ আগে পাকিস্তানী বায়ুসেনা ভারতের পাঠানকোট, শ্রীনগর, জোধপুর, ও আগরার বমানবন্দরে বোমাবাজি করেন, আমার একদম সন্দেহ নেই যে জিত ভারতের জনগনের ভারতের সেনার হবে

এরই মধ্যে ভারত পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়ে যায় /১২/১৯৭১ এর হামলার জবাবে ভারত অপরেশন ট্রাইডেন শুরু করে দেয় এদিকে আমেরিকা পাকিস্তানের সমর্থনে সপ্তন নৌবহর পাঠিয়ে ছিলেন, অন্যদিকে ভারত ও রাশিয়ার চুক্তি অনুযায়ী রাশিয়া ও তাঁর অষ্টম নৌবহর পাঠান, বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুই দেশ ও এই যুদ্ধে যুক্ত হয়ে পরেন ইন্দিরা গান্ধী ঠিক করেছিলেন আমেরিকার সপ্তম নৌবহর ভারতের নিকট পৌঁছার আগে পাকিস্থান কে আত্মসমর্পণের জন্য রাজী করাতে হবে, ফলে সেনা প্রমুখ পাকিস্থান কে আত্মসমর্পণের জন্য সতর্ক করে দেন। আমেরিকা ও চিনের প্রভাবে পাকিস্থানি সেনাপ্রমুখ আত্মসমর্পণ করতে বারন করে দেন, সেই সময় ভারতীয় সেনা ঢাকাকে তিনদিকে ঘিরে রেখেছিলেন ১৪/১২/১৯৭১ ভারতীয় সেনা ঢাকায় পাকিস্থানের গবর্নরের বাড়িতে হামলা করেন তখন সেখানে পাকিস্থানের সব বড় অফিসারা মীটিং এর জন্য জমা হয়েছিলেন। এই ঘটনার পর পাকিস্থান দুর্বল হয়ে পড়েন এবং যুদ্ধ সমাপ্তির প্রস্তাব পাঠান, ভারত জানিয়ে দেন শুধু মাত্র আত্মসমর্পণেই যুদ্ধের সমাপ্তি সম্ভব। মাত্র ১৩ দিনে যুদ্ধের সমাপ্তি হয় ১৬/১২/১৯৭১ ভারতীয় সেনা পাকিস্থানের ৯৩ হাজার সেনাকে বন্ধী বানিয়েছিলেন। ইন্দিরা গান্ধী পাকিস্থানের ইতিহাস না শুধু মানচিত্র ও পরিবর্তন করে দিয়েছিলেন। পূর্ব পাকিস্থান কে আলাদা করে করে নতুন এয়াক্তি দেশ বাংলাদেশ গঠন করেছিলেন ইন্দিরা গান্ধী, এবং বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি হলেন শেখ মুজিবুর রহমান।

সেই সময় ভারতের পূর্ব প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপাই পার্লামেন্টে ইন্দিরা গান্ধী কে মা দুর্গা ও বলেছিলেন। ইন্দিরা গান্ধী ভারতকে এগিয়ে নিয়ে গিয়ে শক্তিশালী দেশ গড়তে চেয়েছিলেন। ৯/০৪/১৯৭১ ভারতের ছাত্র ছাত্রীদের স্বার্থে ইন্দিরা গান্ধী কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠন এন এস ইউ আই এর প্রতিষ্ঠা করেন। ১৪ মে ১৯৭৪ পুখরানে পরমাণু বোমা বিস্ফোরণ করিয়ে ইন্দিরা গান্ধী সারা বিশ্বকে নিজের সক্তি দেখিয়েছিলেন। ইন্দিরা গান্ধী তখন “Iron Lady” হয়ে উঠেছিলেন সত্তরের দশক ছিল ইন্দিরা গান্ধীর দশক সেই সময় বলা হতো ক্যাবিনেটে একমাত্র পুরুষ ছিলেন ইন্দিরা গান্ধী ইন্দিরা গান্ধী খুব দৃঢ় ছিলেন, তিনি অনেক কঠিন পরিস্তিথিতেও  খুব শান্ত থাকতেন। ১৯৭২ সালে পাকিস্থানের প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্ট যখন সিমলা চুক্তির ব্যাপারে ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে কথা বলতে এসেছিলেন। ইন্দিরা গান্ধী তাঁর সঙ্গে দেখা করেন। কিন্তু ভুট্ট যখন সাংবাদিক সন্মেলনে বসেছিলেন তখন তিনি খুব চিন্তিত ছিলেন, তখন ইন্দিরা গান্ধী ভুট্ট কে শুনিয়ে বললেন আপনি এনাদের চিন্তা করবেন না এনারা আপনাকে লোকতান্ত্রিক ও আমাকে দেশদ্রোহী বলে।

১৯৭১ এর সাধারন নির্বাচনে ইন্দিরা গান্ধী রাজ নারায়ণ কে নির্বাচনে হারিয়েছিলেন। তখন রাজ নারায়ণ নির্বাচনে দুর্নীতির অভিযোগ এনে ইন্দিরা গান্ধীর বিরুধে এলাহাবাদ হাইকোটে মামলা করেন। ১২জুন ১৯৭৫ এলাহাবাদ হাইকোর্ট ইন্দিরা গান্ধীর নির্বাচন বাতিল করে দেন। এই অবস্থায় ভারতে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। সম্পূর্ণ আড়াই বৎসর ভারতে জরুরি অবস্থা লাগু ছিল। জরুরি অবস্থা চলা কালিন ভারতে ইন্দিরা গান্ধীর বিরুধি আন্দোলন তীব্র আকার ধারন করেছিল।

জরুরি অবস্থা শেষ হলে নির্বাচন কমিশন কংগ্রেসের নির্বাচনী প্রতীক গাই বাছুর সিস করে নেন, সেই সময় যখন ইন্দিরা গান্ধী কাঞ্চীর কাম বটির আশ্রমে গিয়েছিলেন তখন শঙ্কারাচারিয়া স্বামী চন্দ্রশেখর সরস্বতী হাত দেখিয়ে ইন্দিরা গান্ধী কে আশীর্বাদ করেন, সেই থেকে কংগ্রেসের নির্বাচনী প্রতীক হয় হাত চিহ্ন। কংগ্রেস (R) পরিবর্তন করে করা হয় কংগ্রেস (I), তখন মোরারজি দেশাই জনতা পার্টির গঠন করেন

১৯৭৭ সালে সাধারণ নির্বাচন হয় নির্বাচনে কংগ্রেস নির্বাচন হেরে যান, এবং স্বাধীনতার ৩০ বছর পর প্রথন অকংগ্রেসি সারকার গঠন হয়

নয়া মন্ত্রিসভার মুখ্য আলোচনার বিষয় যেন তেন প্রকারে ইন্দিরা গান্ধী কে গ্রেপ্তার করতে হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রি চৌধুরী চরণ সিং এর উপর প্রচণ্ড চাপ, গ্রেপ্তার করতে হবে ইন্দিরা গান্ধী কে চৌধুরী চরণ সিং চাইছিলেন সংবিধানের পবিত্রতা বজায় রেখে সংবিধান অনুযায়ী ইন্দিরা গান্ধী কে অভিযুক্ত করতে, কিন্তু সহযোগীদের প্রবল চাপের ফলে ঠিক করা হয় ১ অক্টোবর গ্রেপ্তার করা হবে ইন্দির গান্ধী কে পরে ১ অক্টোবর রবিবার ও ২ অক্টোবর গান্ধী জয়ন্তী থাকার ফলে ৩ অক্টোবর নির্ধারিত সময়ে ইন্দিরা গান্ধীর বাড়িতে বিরাত পুলিশ বাহিনীসহ চৌধুরী চরণ সিং এর বিশ্বাসী সিবিআই অধিকর্তা এন, কে সিং হাজির হন। এদিকে সাঞ্জয় গান্ধী ও মেনকা গান্ধী দ্বারা সর্বত্র খবর ছড়িয়ে পড়ে। পার্টির কর্মকর্তা ও পদাধিকারি দের ভীর ক্রমশ বাড়তে থাকে। কিন্তু ইন্দিরা গান্ধী কে গ্রেপ্তার করা যাচ্ছে না। ইন্দিরা গান্ধীর একটাই দাবি এরেস্ট ওয়ারেন্ট দেখাতে হবে, কিন্তু সিবিআই এবং পুলিশ শুধুমাত্র FIR এর কপি দেখান এবং কোন কপি দেওয়া যাবেনা বলে জানান ইন্দিরা গান্ধী রাগান্বিত হয়ে জানতে চাইলেনএটা কী নতুন চৌধুরী আইন”? এবং বলেন তবে হাতকড়া পরিয়ে গ্রেপ্তের করতে হবে কিন্তু প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর নির্দেশ জওহরলাল নেহরুর কন্যা যিনি ১১ বছর ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তাঁকে হাতকড়া পরিয়ে যেন গ্রেপ্তের করা না হয় অবশেষে সন্ধ্যা ৭ টায় ইন্দিরা গান্ধী নিজে গাড়িতে বসে গ্রেপ্তার বরন করেন কিন্তু পরদিনই কোর্ট থেকে ছাড় পেয়ে যান
জারাইন্দিরা গান্ধীর বিরুধে ছিল, তারা পরবর্তী সময়ে বিভক্ত হয়ে যান ৩ বছরের মধ্যে মোরারজি দেশাইয়ের সরকার ভেঙ্গে যায় তখন মোরারজি দেশাই চৌধুরী চরণ সিং এর নেতৃতে সরকার গঠন করেন এবং বাইরে থেকে তাঁকে সমর্থন করেন। কিন্তু এই সরকার ও ৬ মাসের মধ্যে ভেঙ্গে যায়।

১৯৮০ সালে পুনরায় নির্বাচন হয় কংগ্রেস শ্লোগান দেয় “ইন্দিরা লাও দেশ বাচাও” ইন্দিরা গান্ধীর প্রচেষ্টায় তখন কংগ্রেস ৩৭৪ আসনে জয়লাব করেন। এরই মধ্যে বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় সাঞ্জয় গান্ধীর।

ইন্দিরা গান্ধী ছেলের মৃত্যু শুকে কাতর হয়ে পড়েন। ইন্দিরা সম্পূর্ণ একা হয়ে পড়েছিলেন। যে ছেলে কে ইন্দিরা গান্ধী তাঁর রাজনৈতিক উত্তরাধিকারী বানাতে চেয়েছিলেন, সে ছেলে সারা জীবনের মত তাঁর থেকে দূরে চলে যায়।

যে বড় ছেলে রাজীব গান্ধী কে তিনি সবসময় রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে চেয়েছিলেন, সেই রাজীব গান্ধী কে ফিরে আসতে বলা ছাড়া তাঁর আর কোন উপায় ছিল না। তখন রাজীব গান্ধী “Indian Airlines” এর পাইলট ছিলেন, রাজীব গান্ধী ও একা মা কে সঙ্গ দিতে স্ত্রী ও সন্তান দের নিয়ে ফিরে আসেন ১১ মে ১৯৮১ সালে রাজীব গান্ধী কংগ্রেসের পতাকা হাতে নিয়ে সম্পূর্ণ রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন

ইন্দিরা গান্ধীর জীবনটা খুবই আলাদা ছিল দুঃখ, কষ্ট, আদর, ভালোবাসা, সংগ্রাম সবকিছু মিলিয়ে ছিল কিন্তু ৮০র দশক গান্ধী পরিবারের জন্য প্রতিকূল অবস্থা ঠিক করে রেখেছিল

পূর্ব পাঞ্জাবে আতংবাদ বেড়ে উঠেছিল কোন একসময়ে ইন্দিরা গান্ধীর কাছের লোক জার্নাল সিং ভিন্দ্রাওয়ালা পুরো পাঞ্জাবে আতঙ্কবাদের পথে ঠেলে দিয়েছিল ইন্দিরা গান্ধীর সামনে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল পাঞ্জাব কে আতঙ্কবাদের হাত থেকে রক্ষ্যা করতে, অনিচ্ছা সত্ত্বেও ইন্দিরা গান্ধী সেই পরিস্থিতিতে ভারতের সেনার সাহায্য নেওয়াটাই উচিৎ বলে মনে করেন, আর এরনাম দেওয়া হয় “Operation Bluestar” উগ্রবাদীরা তাঁদের লোকজনদের নিয়ে পাঞ্জাবেন স্বর্ণ মন্দিরে লুকিয়েছিলেন ৫ জুন ভারতীয় সেনা স্বর্ণ মন্দিরের ভিতরে ঢুকে পড়েন এচত অনেক গুলাগুলি হয় এবং সব উগ্রবাদীরা মারা যান এই ঘটনার পর ইন্দিরা গান্ধী মানোসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েন পাঞ্জাবের উগ্রবাদ তখনো শান্ত হয়ে যায়নি ভারতীয় সুরক্ষা সংস্থা থেকে ইন্দিরা গান্ধীর প্রান হানির সম্ভাবনার আঁচ করেন দেহরক্ষীদের মধ্যে থাকা দুজন শিখ দেহরক্ষীদের সরিয়ে দেওয়া হয় এই খবর ইন্দিরা গান্ধীর কানে গেলে তিনি খুব রেগে যান এবং শিখ দেহরক্ষীদের ফিরিয়ে আনার আদেশ দেন তখন ইন্দিরা গান্ধী বিমর্শ হয়ে উঠেছিলেন তিনি তাঁর সব ভাষণে নিজের মৃত্যুর কথা বলতে লাগেলেন

৩০/১০/১৯৮৪ ভুবনেশরের জনসভায় ইন্দিরা গান্ধী বলেছিলেন
ইন্দিরা গান্ধী – “I Shall Continue to serve until my last breath and when I die, I can say, that every drop of my blood will invigorate India and strengthen it.”

ইন্দিরা গান্ধী এই ভাষণ ঠিক তাঁর মৃত্যুর একদিন আগে দিয়েছিলেন হয়তো তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে তাঁর মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে এসেছে কে জানতেন যে ইন্দিরা গান্ধী তাঁর মৃত্যুর ভবিষ্যৎ বানী করছিলেন ৩০ অক্টোবর অনেয়াক রাতে ইন্দিরা গান্ধী ঘুমতে যান ও যাওয়ার আগে তাঁর সহায়ক আর কে ধাওয়ান কে পরদিনের সব সাক্ষাৎ বাতিল করে দিতে বলেন শুধু বি বি সির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন বলেন

৩১ অক্টোবর, ১৯৮৪- ১ সাফদরজংগ রোড, সকাল ৯ টা
ইন্দিরা গান্ধী তৈরি হয়ে বি বি সির এক সাক্ষাতের জন্য তাঁর বাড়ি থেকে বেরন। তাঁর সহায়ক আর কে ধবন তার সঙ্গে ছিলেন। ইন্দিরা গান্ধী গেইটে পৌঁছানোর আগেই তার দু দেহরক্ষী বিয়ন্ত সিং, এবং সতবন্ত সিং তার উপর গুলি চালাতে শুরু করে, ২৫ সেকেন্টের মধ্যে প্রায় ৩০ টি গুল লাগে ইন্দিরা গান্ধীর দেহে। সেখানে তার বাকি দেহরক্ষীরা সতবন্ত সিং কে গুলি করে মেরে ফেলেন এবং বিয়ন্ত সিং বন্দুক ফেলে হাত উপরে উঠিয়ে দারিয়ে যান। ইন্দিরা গান্ধীর রাক্তাক্ত দেহ সেখেনে পড়েছিল নিজ বাড়িতে নিজ বিশ্বাস ঘাতক দেহরক্ষীদের হাতে আহত হয়েছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। আহত ইন্দিরা গান্ধী কে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এই খবর সারা দেশে আগুণের মত ছড়িয়ে পড়ে, All India Institute Of Medical Science (AIIMS) হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ইন্দিরা গান্ধী কে সেই হাসপাতালের সামনে লোকের ভিড় জমতে থাকে রাজীব গান্ধী তার পশ্চিমবঙ্গের সভা বাতিল করে দিল্লি ফিরে আসেন বিকেলে রেডিও ও টিভিটে ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যুর সংবাদ পড়া হয় বিশ্বে নেতৃত্ব দেওয়ার ইন্দিরা গান্ধী চির নিদ্রায় শায়িত হলেন ইন্দিরা গান্ধীর শেষ দর্শনের জন্য জনঢল লেগেছিল সারা দেশের মানুষের চোখে জল ছিল সারা দেশের মানুষ কাঁদছিলেন তখন ভারতের অতীবপ্রিয় জননেত্রি ছিলেন ইন্দিরা গান্ধী, ইন্দিরা গান্ধী কে ছাড়া ভারতের কথা তখন স্বপ্নেও কেউ ভাবতে পারতেন না গান্ধী পরিবারের জন্য এটা ছিল অতিব দুঃখের অধ্যায়, রাজীব ও সনিয়া নিজেদের সামলাচ্ছিলেন ছোট রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা বুঝতে পেরেছিলেন তাদের ঠাকুরমা আর ফিরে আসবেনা ৩ নভেম্বর, ১৯৮৪ ইন্দিরা গান্ধীর অন্তিম যাত্রা বের হয় ৯৪ টি দেশের প্রতিনিধি সামিল হয়েছিল এই যাত্রায়, রাজীব গান্ধী ইন্দিরা গান্ধীর মুখাগ্নি করেন ধীরে ধীরে ইন্দিরা প্রিয়দশিনীর দেহ আগুনে পুড়ে লীন হয়ে যায়

ইন্দিরা গান্ধী মৃত্যুর পরও অমর হয়ে আছেন তার ভারতের ১৩০ কোটি মানুষের মনে আজও প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের তুলনা করা হয় ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে ভারতের রাজনীতিতে ইন্দিরা গান্ধী এক অমর চরিত্র



Shreyasi Laskar/ শ্রেয়শী লস্কর

Comments

Popular posts from this blog

জালিয়ানওয়ালাবাগ

ত্রিপুরার আদিবাসী অঞ্চল স্বায়ত্তশাসিত জেলা পরিষদ

২১ মে – শহিদ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি