~ আজকের সমাজ ~
সময় বদলেছে, দিন বদলেছে, মানুষ বদলেছে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলেছে, রীতি নীতি, আচার আচরণ, খানিকটা শিক্ষিত হয়েছে সমাজ, আমাদের রাজ্যে এখন অস্পৃশ্যতা, জাত পাত নেই, ছেলে মেয়ের বিবেধ ও শিক্ষিত সমাজে খানিকটা কমেছে। এখন মেয়েরা চাকরি করে, ব্যাবসা করে, রাজনীতি করে, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, উকিল, সব ক্ষেত্রে এখন মেয়ে ছেলে সমান। দেশ স্বাধীনের পর রচিত হয় সংবিধান, আমাদের ভারতীয় সংবিধানে ছেলে ও মেয়েকে সমান অধিকার দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু সবকিছুর পর ও বলতে হয় আমরা এখনো বাস করি পুরুষ তান্ত্রিক সমাজে, ভারতবর্ষে ধর্ষণ দিন দিন বেড়েই চলেছে, আজও ধর্ষন হলে দোষারোপ করা হয় সেই মেয়েদের, কেউ তার পোশাক কে দোষারোপ করে, কেউ বা তার চরিত্র কে, তবে আজকের নারীরা বেশ প্রতিবাদি তাই অনেকে বলার সাহস না পেলেও মনে মনে তারা ও মেয়েদেরই সবকিছুর জন্য দায়ি করেন।
আজও মেয়েদেরই হেসেল সামলাতে হয়, আজ ও ছোট থেকেই শেখানো হয় তুমি ডাক্তার হও বা ইঞ্জিনিয়ার কাজ তোমাকে করতেই হবে, হেসেল তোমাকেই সামলাতে হবে তুমি যে মেয়ে।
তোমার মন যতই পবিত্র হোক না কেন কাজ থেকে রাত করে বাড়ী ফিরলে লোকে তোমার চরিত্র নিয়ে কথা বলবেই তুমি যে মেয়ে, তাই সব শুনে ও চুপচাপ সইতে হবে তোমাকে, প্রতিবাদ ও হয় এখন সে সাময়িক কিছু দিন চুপ থেকে পড়ে আবার যেই কি সেই।
এই শিক্ষিত সমাজে আজও ছেলে মেয়ে কথা বললে, এক সঙ্গে ঘুুরলে দেখা হয় না ভাল চোখে, তবে এই সমাজে যারা নিজেদের নিয়ে ব্যাস্ত থাকেন তারা কেবল এই সবে থাকেন না।
আজ ও মেয়েদের শেখানো হয় ছেলেদের থেকে দূরে থাকতে, তাদের সঙ্গে কম বন্ধুত্ব করতে, বাড়ির বাইরে তাদের সঙ্গে ঘুরাঘুরি, কথাবার্তা কম বলতে।
কেন আজ ও কোথাও ঘুরতে গেলে মেয়েদের ভাবতে হয় সমাজের কথা? কেন ঘরের বাইরে কোন ছেলের সঙ্গে কথা বললে মেয়েদের বার বার ঘুরে দেখতে হয় চারপাশ যেন কেউ না দেখে? কেন আজ ও ছেলে মেয়েরা বন্ধু হয়ে চলতে পারে না এক সঙ্গে? কেন আজ ও মেয়েদের কোথাও যেতে হলে সঙ্গে মেয়েদেরই নিয়ে যেতে হয়, নইলে সমাজ খারাপ বলে? আজ ও এই সমাজে মেয়েরা বাড়ির বাইরে থাকলে মা বাবা তার চিন্তায় ঘুমুতে পারেন না।
কোথায় ছেলেদের বেলায়ত আজও এই সব চিন্তা করতে হয় না।
বর্তমান ভারতে মহিলা ভোটার ৪০ শতাংশের বেশি হলে ও মহিলাদের চলতে হয় পুরুষের কথায়, প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী জি তার সময় কালে পঞ্চায়েত ও পৌরসভার ৩৩% মহিলা সুরক্ষিত করিয়েছিলেন, তার সময় কাল থেকে আজ পর্যন্ত বিধানসভা ও লোকসভায় ৩৩% মহিলা সুরক্ষিত করার জন্য প্রচেষ্টা চলছে তবে আজ ও তা হয়ে উঠে নি।
আজ ও বিয়ের পর সন্তান কে মানুষ করতে বহু মেয়েদের ছেড়েদিতে হয় চাকরি, আজ ও বহু মানুষ শিক্ষক মেয়ে বিয়ে করে কেবল সন্তানদের শিক্ষিত করার জন্যে, আজ ও বহু মা বাবা কেবল ভাল শিক্ষিত বরের আশায় তাদের মেয়েদের পড়াশোনা করান।
তবে কি আমরা বলতে পারি সমাজ বদলেছে, শিক্ষিত হয়েছে? আইনের ভয়ে খানিকটা বদলালে ও ভিতরে আজ ও বাসা বেঁধে আছে চিড়া চরিত প্রথা রীতি নীতি।
আজ মানুষ চাঁদে পৌঁছে গেছেন বিজ্ঞান উন্নতি করছে এই বিজ্ঞানের দুনিয়ায় ও মেয়েদের মাসিক সমস্যা হলে তাদের যেতে দাওয়া হয় না পূজা ঘরে কোন শুভ কাজে, তবে এ কোন শিক্ষিত সমাজ?
কেন সব কিছুর জন্য দোষারোপ করা হয় কেবল মেয়েদেরকে? তবে এ কিসের স্বাধীনতা, সত্যিই কি এই কুসংস্কারের বেড়াজাল থেকে স্বাধীন হয়েছে হতে পেরেছে আমাদের সমাজ? মেয়েরা কি পেয়েছে পূর্ন স্বাধীনতা? ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, রাজারাম মোহন রায় সহ প্রত্যেক মনীষীরা যারা প্রতিনিয়ত কুসংস্কার মুক্ত ভারত গড়ার স্বপ্ন দেখে লড়াই করে গেছেন তারা কি সফল হতে পেরেছেন?
~ শ্রেয়শী লস্কর ~
Comments
Post a Comment